দেশের সব মসজিদে আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে জামাত সংক্ষিপ্ত করার কথা বলেছে ইফা।

দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইফা। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ২৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষার বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে বৈঠক করে। সেই বৈঠকেও আলেমরা মসজিদগুলোতে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের সংখ্যা সীমিত রাখার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে বলা হয়- মসজিদ বন্ধ থাকবে না, তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে মসজিদে গমন করবেন না।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারও রোববার আলেমদের নিয়ে বৈঠক করে ইফা। বৈঠকে আরব দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসল্লিদের মসজিদে নামাজ বন্ধের বিষয়গুলো সামনে রেখে বাংলাদেশেও পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মতামত চায় ইফা।

ইফার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে ৮ ধরনের মুসল্লিদের মসজিদে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইফা।

সেগুলো হলো:

১. যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

২. যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে।

৩. যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন।

৪. যারা উক্তরূপ মানুষের সংস্পর্শে গেছেন।

৫. যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

৬. বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু।

৭. যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত।

৮. যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইফা আরও বলেছে, যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনা মেনে চলবেন।

মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটিকেও করণীয় সম্পর্কে ৮টি পরামর্শ দিয়েছে ইফা।

সেগুলো হলো:

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা।

২. জামাত সংক্ষিপ্ত করা।

৩. জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা।

৪. বর্তমান সংকটকালে দরসে হাদিস, তাফসির ও তালিম স্থগিত রাখা।

৫. ওজুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা।

৬. বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো।

৭. ইশরাক, তিলাওয়াত, জিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা।

৮. ঢাকাসহ দেশের কোনও মসজিদে যদি কোনও বিদেশি অবস্থান করেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

এছাড়াও ইফা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাজা সম্পর্কে বলেছে- হাদিসের বর্ণানুযায়ী মহামারিতে মৃত মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। করোনায় মৃত ব্যক্তির কাফন, জানাজা ও দাফন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে করা জরুরি। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফনে সহযোগিতা করুন। তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ বা কোনরূপ অসহযোগিতা করা শরীয়তবিরোধী ও অমানবিক।

এই সঙ্কটময় সময়ে অন্যকে সাহায্য করার বিষয়ে ইফার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- হাদিস শরীফে আছে দান-সাদকার মাধ্যমে বালা মছিবত দূর হয়। এই সঙ্কটটকালীন সময়ে আল্লাহর রহমত লাভের উদ্দেশে দুস্থ ও অসহায়দের বেশি বেশি দান-সাদকা করুন। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

গুজব সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে ইফার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- গুজব মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গুজব সৃষ্টি করা বা গুজবে বিশ্বাস করা বর্জন নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় হেফাজতে ইসলামের আমির ও আল জামিয়াতুল দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফী, চট্টগ্রামের আল জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার নাযেমে তালিমাত মুফতি নুরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া মুহতামিম মুফতি মোবারকুল্লাহসহ অনেক আলেমের পরামর্শ নেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম।