ফেনীতে প্রশাসনের নজরদারিতে রয়েছেন প্রবাসীরা। তারা হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা মেনে চলছেন কিনা নিয়মিত তা তদারকি করছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। একই সাথে করোনা ইস্যুতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

রবিবার (২২ মার্চ) দুপরে দাগনভূঞায় হোম কোয়ারেন্টাইনের নিদের্শনা না মানায় এক প্রবাসীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান এ জরিমানা করেন।

মোঃ রবিউল হাসান বলেন, কয়েকদিন আগে উপজেলার দক্ষিণ আলীপুর এলাকার ওই আরব আমিরাত প্রবাসী দেশে আসেন। তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছিলেন। অভিযোগ পেয়ে বাড়িতে গিয়ে তাকে সতর্ক করা হয়। একই সাথে নির্দেশনা অমান্য করায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার উপজেলার গজারিয়া গ্রামে দুটি বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টিনে নির্দেশনা মেনে না চললে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। 

একই দিন ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন প্রবাসীর বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া তাহের। এসময় হোম কোয়ারেন্টিনের গুরুত্ব প্রবাসীদের বুঝিয়ে বলেন তিনি। একই সাথে নির্দেশনা মেনে চলতে তাদের সতর্ক করেন।

অন্যদিকে ফুলগাজীতে নির্দেশনা অমান্য করায় আরেক প্রবাসীর ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
 
শনিবার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় মাইক হাতে করোনা সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিজেই প্রচারণাই নামে ইউএনও অজিত দেব। একই সাথে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন দোকানীর জরিমানা করেন তিনি।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, ফেনীর ২৪১০ ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৫৪ জন প্রবাসী ও তাদের পরিবারের ২০৫৬ সদস্য রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ফেনীর ১৫৬জন প্রবাসী ও তাদের পরিবারের ৮৯১জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে পরশুরামের ৮জন, ছাগলনাইয়ায় ১০ জন, ফেনী সদরে ৩৬জন, সোনাগাজীতে ৮জন, দাগনভূঞায় ৭৬জন, ফুলগাজীতে ১৮জন প্রবাসী রয়েছে। এর আগে ২১৯জন প্রবাসী ও তাদের পরিবারের ১২৩৭জন সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এরমধ্যে ২১জন প্রবাসী ও পরিবারের ৭২ জন সদস্যের কোয়েরেন্টিন পূর্ণ হয়েছে। 

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য কর্মীরাসহ স্থানীয় প্রশাসন পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এর মধ্যে যাদের কোয়ারেন্টিন পূর্ণ হয়েছে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তাবে তাদের কারো মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা যায় নি। তবে ফেনীতে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ও করোনা সনাক্তকরণ কীট নেই বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনা ইস্যুতে দ্রব্যমুল্যের স্থিতিশীল অবস্থা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত দুই দিনে ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বেশি দামে পণ্য বেচায় ৮৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জেলা জুড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের অজুহাতে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি না করতে এবং প্রতিটি দোকানে পণ্যের মুল্য তালিকা টানিয়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ফেনীতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে নানা উদ্যোগের কথা জানান জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান। তিনি বলেন, স্থানীয জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রবাসফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিন পালনে বাধ্য করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি আমরা। এছাড়া প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত আছে। 
 
তিনি বলেন, কাউকে আক্রান্ত সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।