মুজিববর্ষ প্রাক্কালে দৃষ্টিনন্দন সাজে সেজেছে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গন। প্রশস্ত গেইট পার হলেই ডানে চোখে পড়ে সাজানো ওয়াকওয়ে। ২৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওয়াকওয়েটি সাজানো হয়েছে বাংলার প্রাচীনকাল হতে স্বাধীনতা অব্দি সময়কালের তথ্যসম্বলিত স্থিরচিত্র আর সাতটি প্রতীকী স্তম্ভে।


সাজসজ্জায় ওয়াকওয়েটি রূপ পেয়েছে ছাদহীন একটি টানেলের মত। মাঝামাঝি হতে সাতটি প্রতীকী স্তম্ভে তুলে ধরা হয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৬’র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ অভ্যূত্থান এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। টানেলের শেষ প্রান্তে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর বড় স্থিরচিত্র।

জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান জানান, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে কার্যালয় প্রাঙ্গনে সাজানো হচ্ছে আর্য হতে একাত্তরের ইতিহাস এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও অর্জন নিয়ে।


তিনি বলেন, বাঙলা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু, এ তিনটি বিষয় ওয়াকওয়েতে তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাতটি স্তম্ভের মর্ম আদলে প্রতীকীস্তম্ভগুলো এতে স্থান পেয়েছে।


মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন চৌধুরী বলেন, প্রধান ফটক হতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পার্কিং এরিয়ার শেষ পর্যন্ত ৩০০ ফুট দীর্ঘ এ স্থানটিতে একাধিক বৈচিত্র রয়েছে।


তিনি বলেন, আর্য হতে বৃটিশ সময়কাল পর্যন্ত বাঙলা শাসিত হয়েছে অবাঙালি দ্বারা। মাঝে কয়েকজন নবাব শাসন করলেও তারা দিল্লীকে প্রদেয় শর্তে পরাধীন ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুই একমাত্র ব্যক্তি যিনি একজন বাঙালি হিসেবে বাঙালির জন্য সফল সংগ্রাম করেছেন, স্বাধীনতা এনেছেন। তাই ওয়াকওয়েতে স্থান পেয়েছে বাঙলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা।


তিনি জানান, ওয়াকওয়ের শুরুটা সাজছে আর্যদের দিয়ে। একইসাথে স্থান পাচ্ছে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, সুলতানী ও মোঘল আমলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও বিরল কিছু ছবি। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবনকালের কিছু কথা ও ছবি। ওয়াকওয়ের মাঝামাঝি হতে বাঙালির চুড়ান্ত অর্জন স্বাধীনতার পথে আন্দোলন সংগ্রামের প্রতীকী হিসেবে সাতটি স্তম্ভ এবং শেষে বঙ্গবন্ধুর স্থিরচিত্র।


কার্যালয়ের পার্কিং এলাকার শেষ প্রান্তে ত্রিশ ফুট জায়গা জুড়ে তৈরী করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মূল সিঁড়ির বাম পাশে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। ঝলমলো আলো আর বাহারি রংয়ে সেজেছে বই সম্ভারের জন্য তৈরী করা স্থানটি। ঢুকতে সামনের দেয়ালে কালজয়ী তিন কাব্যের একক ফ্রেম। কবি রফিক আজাদের ‘এই সিঁড়ি’; নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’; সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’। এর পাশে রয়েছে পাঠকের জন্য আসন ব্যবস্থা। শেষপ্রান্তে ফ্রেমবন্দি হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ।


জেলা প্রশাসক বলেন, নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে এখানে আসতে আহবান করবো। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে সম্মেলন কক্ষে শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটে। আমরা তাদের বাংলার ইতিহাস এবং জাতির পিতাকে দেখতে ও শিখতে আমন্ত্রণ জানাবো।


সাজসজ্জার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নান্দনিক এর প্রধান নির্বাহী তৌহিদ শিমুল জানান, সম্পুর্ণ স্বাতন্ত্র্য পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে সমগ্র এলাকাটি। যেকোনো বয়সের মানুষ এখানে এসে এক নজরে বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাদ পাবে। তিনি জানান, কাজ প্রায় শেষ। চলছে শেষ মূহুর্তের ছোঁয়া।