‘দিন শেষে অন্যের হাসি আমাদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। একজন অস্বচ্ছল বন্ধুর পরিবার যখন আমাদের উপহার পেয়ে খুশি হয়, সেটিই আমাদের তৃপ্তি। এই সংকটে দলমত আমরা বুঝি না, আমরা বন্ধু হয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে চাই। সকলে মিলে এ সংকট মোকাবেলা করতে চাই। ’
আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) সকালে মুঠোফোনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ফেনীর অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর সহযোগিতা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তার বাড়ি ফেনীর পরশুরামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। দেশে চলমান করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অসহায়দের পাশে এগিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের এ নেতা ও তার বন্ধুরা।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কার্যত সারাদেশ অচল হয়ে পড়েছে। এতে যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা, তেমনি নিম্ন মধ্যবিত্তরাও পড়ছেন বিপাকে। নিম্ন বিত্তরা সরকারি, বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তরা মুখ বুজে থাকছেন। আর এ সংকটে পড়েছে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যায়নরত ফেনীর অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার।
সাদ বলেন, ফেনীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বেশিরভাগই টিউশানি করে নিজেদের পড়ালেখার খরচ যোগান, সংসারের খরচও যোগান। চলমান পরিস্থিতিতে তারা গৃহবন্দী। তাদের আয়ের পথ বন্ধ। এতে করে সংকটে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবারগুলো। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা এ উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কেউ অভুক্ত থাকবে না। আমরা তাঁর সেই কথাকে বাস্তবে রূপ দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের নির্বাচিত সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি চাইনা, ফেনীর কোন শিক্ষার্থী কোন দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করুক। যার কারণেই এমন উদ্যোগ। যেহেতু আমি একজন ছাত্র, তাই সবার সহযোগিতা নিয়ে এই কাজে নেমেছি।
তিনি বলেন, অনেকেই আমাদের এ কাজে সাহায্য করছেন। আমরা কারো কাছ থেকে নগদ টাকা নিচ্ছিনা। খাদ্যসামগ্রী নিচ্ছি। যে যার পারছেন, যেভাবে পারছেন সহযোগিতা করছেন। আমরা সেই সহযোগিতা অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বন্টন করে দেবার ব্যবস্থা করছি। ইতোমধ্যে আমার এলাকায় ৪শ পরিবারকে সহায়তা করেছি। আর শিক্ষার্থীদের উপহারগুলো বিতরণের কাজ রমজানের প্রথম দিন হতে শুরু হবে। দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের পরিবারের হাতে এসব গোপনে এসব উপহার তুলে দেয়ার কাজ চলছে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে এই সংকট মোকাবিলা করবো ইনশাল্লাহ।
বিতরণ প্রসঙ্গে সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু নাম্বারে কল করে তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। নিজেদের সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হবে। এসব নাম্বারগুলো হলো; সাদ বিন কাদের চৌধুরী-০১৬২৩০০০১০০। এছাড়া নাজমুল হাসান মুন্না-০১৫২১১০৪৩৩৭, শরিফুল ইসলাম- ০১৫১৫৬০৬৪৮৮, আহসান জোবায়ের- ০১৬১২৯০৪৪৫৩, কামরুল হাসান- ০১৮১১৪২৬৯৮৮, আলতাফ শামস- ০১৫৩৪৯১০২০৮।
তিনি বলেন, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর বর্তমান আবাসস্থল ফেনীতে হতে হবে। শুধু খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হবে (বিকাশে কোন টাকা পাঠানো হবে না), পরিচয় গোপন রাখা হবে, ইতিপূর্বে যারা সহায়তা পাননি তাদের জন্য, সবার তথ্য সংগ্রহ করে তারপর একসাথে পাঠানো হবে।
শিক্ষার্থীদের দেয়া এমন সহায়তাকে তিনি বলছেন উপহার। উপহার বলার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দেখুন আমরা একে অপরের ভাই বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চাই। তাই আমাদের একজন ভাই-বন্ধুর বাসায় এই সংকটে ত্রাণ যাবে না, যাবে পাশে থাকার উপহার।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ‘মিশন ডিইউ ফ্যামিলি’ নামে স্বেচ্ছাসেবী প্লাটফর্ম গঠন করেছে ডাকসু। এতেও যুক্ত আছেন ডাকসু’র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।