‘মানুষ মানুষের জন্য। হোক না সে কোভিড-১৯ আক্রান্ত। তিনি মারা গেলে, তার শেষ বিদায়ের জন্য কেউ এগিয়ে আসবেনা। এটা হতে পারেনা। সেই মৃত মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনে আমরা ভীত নই।’
কথাগুলো পরশুরাম উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইয়াছিন শরীফ মজুমদারের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাক্রমে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে আজ রবিবার (১৯ এপ্রিল) ফেনীর পরশুরাম উপজেলাতেও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির জানাযা, দাফন করতে ১০জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হয়েছে। তবে দলের নেতৃত্বে কোন আলেম দিচ্ছেন না। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াছিন শরীফ মজুমদার। সম্পূর্ণ স্ব-ইচ্ছায় মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে এসেছেন যুবলীগের এ নেতা।
কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে ভীত সন্ত্রস্ত করলেও সবচেয়ে বেশী মানসিক আঘাত এসেছে সংক্রমণে মৃতদেহের যথাযথ মর্যাদা প্রদানে মানুষের নিরাপত্তা ভীতি। এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের জানাজা ও দাফনে আত্মীয়-স্বজনেরা প্রতিবেশীরা এগিয়ে না আসার খবর আসছে সারাদেশ থেকে। এমন খবর পাওয়া গেছে, অনেকে তাদের স্বজনদের লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়েছে। তবে এর ব্যতিক্রম আছেন কিছু মানুষ। কোভিড-১৯ ভীতিকে সম্পূর্ণ উপক্ষো করে স্বেচ্ছায় নিজেরা এগিয়ে এসেছেন ওইসব মৃত ব্যক্তির পাশে। তাদের শেষ শ্রদ্ধা ও শেষ বিদায়ের জন্য মানবতাবোধ আর বিবেকবোধ থেকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি বলেন, আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন মানুষ যদি মারা যান তার দাফন কাফনের বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা রয়েছে। যদিও করোনা আক্রান্ত মৃত মানুষের দেহ নিয়ে চরম ভীতি রয়েছে। তবু এ কাজ করতে কেউ না কেউ আসতেই হবে। আমরা তাই স্ব-ইচ্ছায় এ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের দলে যুবলীগের আরও একজন সদস্য রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফ্রেন্ডস ইউনিটি ব্লাড ডোনার ক্লাবের ২জন, কুঁড়েঘর ফাউন্ডেশনের ২জন, ২ জন স্থানীয় আলেম ও ১ জন স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আকতার বলেন, কয়েককদিন আগে মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত চিঠির প্রেক্ষিতে করোনায় মৃতদেহের দাফনের জন্য দশজন আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবী চেয়ে অফিশিয়াল ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছিলাম। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াছিন শরীফ মজুমদারের নেতৃত্বে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল আমার সাথে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রমে এ টিমের সদস্যরা সহায়তা করবেন। তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মৃতদেহ সৎকারে হিন্দুধর্মাবলম্বী একটি স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুতের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়াও ৩ জন নারী স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
এ দলে আরও রয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী তুহিন, মোঃ খায়রুল আলম মজুমদার প্রাইম, আরিফুল ইসলাম মজুমদার রাহুল, মুহাম্মাদ আলা উদ্দিন, মনচুর আহাম্মদ. মোঃ জহিরুল ইসলাম হৃদয়, এনামুল করিম আজাদ, আবুল কালাম, নাহিদ হায়দার।
সাক্ষাত শেষে স্বেচ্ছাসেবক দলটিকে পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট প্রদান করেন পিপিই প্রদান করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার।