তিল চাষের প্রচলন ধরে রাখতে ও কৃষক পর্যায়ে বীজ উৎপাদন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরীতে ফেনীতে ৭২৯ শতক জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম জানান, মাঠ হতে এখন ফসল ঘরে তোলার কাজ চলছে, উৎপাদন আশানুরূপ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জানান, দুইটি প্রকল্পের আওতায় ফেনীতে ১৬জন কৃষকের মাধ্যমে ১৬টি তিল চাষের প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬ টন নির্ধারণ করা হয়েছে যা নিশ্চিত অর্জনের পথে।
জেলা কার্যালয়ের উন্নয়ন শাখার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন জানান, কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল তেল, মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় ফেনী সদরে ৩জন কৃষকের ৩ একর জমিতে তিলের প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফেনী জেলায় ১৩ বিঘা জমিতে তিল চাষের ১৩টি প্রদর্শনী করা হয়।
তিনি জানান, ১৩ বিঘার মধ্যে ফেনী সদরে ৫ বিঘা, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৪ বিঘা, সোনাগাজী উপজেলায় ৪ বিঘা জমিতে তিল চাষ করা হয়।
একই সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬টি প্রদর্শনী প্লটে কৃষকদের মাঝে বিতরণকৃত উপাদানের মধ্যে ২২ কেজি বীজ, ৪৮৩ কেজি ইউরিয়া সার, টিএসপি ৩৯২ কেজি, এমওপি ৩৮৩ কেজি, জিপসাম ৬৩৯ কেজি, জিংক সালফেট ৪৬ কেজি, ১৪ কেজি বোরন, বালাই নাশক ও কীটনাশক প্যাকেট, বীজ শোধনের প্যাকেট, জৈব সার ২৮৩ কেজি উল্লেখযোগ্য।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, প্রথম প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি প্রদর্শনীর জন্য ৩ জন কৃষকের প্রত্যেককে ৩ কেজি বীজ, ৮০ কেজি ইউরিয়া সার, টিএসপি ৬৭ কেজি, এমওপি ৪৫ কেজি, জিপসাম ১৮৬ কেজি, জিংক সালফেট ৭ কেজি, ১ কেজি বোরন, বালাই নাশক কীটনাশক প্যাকেট, বীজ শোধনের প্যাকেট, জৈব সার ৭৫ কেজি এবং নগদ ৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় প্লট প্রতি আরও দেয়া হয় বীজ মাপার জন্য ওজন যন্ত্র, বীজ বিক্রির জন্য উপযোগী প্যাকেট, প্যাকেটজাত করতে সিলার মেশিন, বীজ সংরক্ষণে ড্রাম ও বীজ বপন ফসল সংগ্রহে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
শারমীন আক্তার জানান, দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় ফেনী সদরে ৫জন কৃষকের ৫ বিঘা জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। তিল চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষককে ১ কেজি বীজ, ৩১ কেজি ইউরিয়া সার, টিএসপি ২৫ কেজি, এমওপি ২৬ কেজি, জিপসাম ৩৫ কেজি, জিংক সালফেট ৩ কেজি, ১ কেজি বোরন, বালাই নাশক কীটনাশক প্যাকেট, বীজ শোধনের প্যাকেট, জৈব সার ১৬ কেজি এবং নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
তিল চাষ প্রসঙ্গে উপ-পরিচালক বলেন, তিল কৃষি আমাদের কৃষি অর্থনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষক পর্যায়ে তা ধরে রাখতে প্রকল্পগুলোতে তিল চাষ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এর উপকারিতার কারনে বহুমাত্রিক ব্যবহার থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিআরআরআই নোয়াখালী কার্যালয়ের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিলের ব্যবহারিক বৈচিত্র্যতা রয়েছে তাই প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে প্রতিবেশী কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারন আমাদের দেশে জানুয়ারি মাসের পর অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।
কৃষকের উৎপাদিত তিল বীজের বাজার প্রসঙ্গে শারমীন আক্তার জানান, নির্বাচিত কৃষকদের বীজ ব্যবসায়ী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাদের উৎপাদিত বীজের অংকুরোদগমের হার কৃষি বিভাগ পরীক্ষা করে নির্ধারন করে দেবে। এতে কৃষক প্যাকেটের গায়ে তা উল্লেখ করবে। এতে বীজের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। মূলত বীজ ব্যবসায়ীরা কিনবে। তীল বীজ কেজি প্রতি কৃষক ৯০ হতে ১০০ টাকায় বেচতে পারবে।