সংক্রমণের সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চলেছে ফেনীতে করোনা শনাক্ত ‘সাপ্তাহ’! গত শুক্রবার সাপ্তাহ শুরু হয়েছিল ৪১জন শনাক্তের মধ্য দিয়ে। এরপর আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬দিনে নতুন করে আরও ২২৬জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ৬দিনে মোট নুমনা পরীক্ষার করা হয়েছে ৭২৫টি। অর্থাৎ প্রায় ৩টি নুমনার মধ্যে একজন পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। মোট শনাক্তের হার প্রায় ৩১শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ফেনীতে নতুন করে আরও ৩৬ জনের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৫ জনে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৩জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ আরও ১১জন সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন মোট ১২৪জন।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গতকাল বুধবার নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এ ফেনীর ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩৭টি নমুনা পজিটিভ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১টি ২য় নমুনা। নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনী সদরে ১৪জন, ছাগলনাইয়ায় ১১জন, দাগনভূঞায় ৬জন ও পরশুরামে ৪জন রয়েছে। এছাড়া ফেনীর বাইরেরও একজনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল খালেক মামুন বলেন, উপজেলায় নতুন আক্রান্তদের ২ জন পৌর এলাকার বাসিন্দা। অন্যরা মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম সাহেবনগর ও চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চন্দনা গ্রামের। গত ১১ জুন তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
ডাঃ মামুন বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে পৌর এলাকার অনন্তপুরের ৬ মাস বয়সী এক কন্যা শিশু রয়েছে। এর আগে তার পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়াও আক্রান্তদের মধ্যে ১১ বছর বয়সী একজন কিশোর রয়েছে বলে জানান তিনি।
ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শিহাব উদ্দিন জানান, গত ১০ জুনের সংগৃহীত ১৯টি নমুনার ফলাফলে ১১ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ৭ জন পৌরসভার, ২জন কর ৪জন শুভপুর ও মহামায়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি জানান, এ নিয়ে উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৯ জনে। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২জনের, উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৭জন। আজ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিরূপণে ৪৯১ জনের মধ্যে ৩৪৭জনের ফল পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ শনাক্ত করা হয়েছে পৌরসভা এলাকায়। এ পর্যন্ত পৌরসভায় ৫১জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে একদিনের বিরতির পর দাগনভূঞা উপজেলায় ২ পুলিশ সদস্যসহ আর ৪জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুবাইয়াত বিন করিম জানান, নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ৩জন পৌরসভায়, ১ জন করে ৩জন সদর ইউনিয়ন, পূর্বচন্দ্রপুর ও রামনগরের বাসিন্দা। আজ আরও ৫জন সুস্থ হয়েছেন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৩১জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে ১জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হয়েছে ২৪১জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে জেলায় দ্বিতীয় অবস্থানে দাগনভুঞা উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৩৪ জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ১০৪জন, ছাগলনাইয়ায় ৮৯জন, পরশুরামে ৩১জন ও ফুলগাজীতে ৩৪জন। এছাড়া আরও ১২জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বর্তমানে ১৮ জন করোনা রোগী ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১৩জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৩৫জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, এ পর্যন্ত সংগৃহীত মোট ৪ হাজার ৩৩৩টি নমুনার মধ্যে মধ্যে ৩ হাজার ২৫০টি নমুনার ফল পাওয়া গেছে। আজ নতুন করে পরীক্ষার জন্য আরও ১৫৮টি নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে।
১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলাইনাইয়া উপজেলায় এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর আগে শনিবার (১৩ জুন) ফেনীতে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৫জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।