ফেনীতে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৫জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনা শনাক্তের ৫৯তম দিনে এসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চারশ ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪৬৬জন। এ নিয়ে গত ১৬দিনে মোট ৩৫৫জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট শনাক্তের প্রায় ৭৬ ভাগ শনাক্ত করা হয়েছে ১৫ দিনে।
আজ শনিবার (১৩ জুন) দুপুরে নতুন করে আরও ৫৫ জন শনাক্ত করার কথা জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গতকাল নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এ ফেনীর ১৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তারমধ্যে ৫৭ টি নমুনা পজিটিভ, এর মধ্যে ২টি ২য় নমুনা। শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনী সদরে ২০ জন, সোনাগাজীতে ২৬ জন, পরশুরামে ৮ জন, ছাগলনাইয়ায় ১ জন রয়েছে।
সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩জন ইউপি সদস্য, স্বাস্থ্যকর্মী, এনজিও কর্মী, পুলিশ সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সরকারি কর্মচারী।
পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল খালেক মামুন জানান, উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৮৬টি নমুনা সংগ্রহ করে ২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারমধ্য ৯ জন সুস্থ্য হয়েছেন। ৪৫টি নমুনার ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি। নতুন আক্রান্তদের মাঝে ৪ মির্জানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ৩ জন ইউপি সদস্য রয়েছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ২ জন সেবিকা, ১জন এনজিওকর্মী ও পরশুরাম থানার একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছে বলে জানান তিনি।
মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টো বলেন, আমার এবং ৩ ইউপি সদস্যের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
ছাগলনাইয়ায় নতুন করে আরও একজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শিহাব উদ্দিন। তিনি জানান, তিনি শুভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নমুনা দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে সোনাগাজীতে নতুন করে আরও ২৬জন শনাক্তের কথা জানান উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ উৎপল দাশ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হয়েছে ১৭৪জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভুঞা উপজেলায়। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ১০৮ জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ৮১জন, ছাগলনাইয়ায় ৬২জন, পরশুরামে ২৪জন ও ফুলগাজীতে ৯জন। এছাড়া আরও ৮জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বর্তমানে ১৩ জন করোনা রোগী ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১০জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। করোনায় এখন পর্যন্ত জেলায় নয়জন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০১জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৯ মে শুক্রবার ফেনীতে একদিনে ৪৭ জন, গত শুক্রবার (৫জুন) ৩২জন আর শুক্রবার (১২ জুন) ৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মাঝখানে গত ৮জুন একদিনে ফেনীতে সর্বোচ্চ ৪৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। আজ সেই রেকর্ড ভেঙে ৫৫জন শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলাইনাইয়া উপজেলায় এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মাঝখানে আক্রান্তের হার সীমিত থাকলেও মে তে এসে তা লাফিয়ে লাফিয়ে ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। জুনে এসে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হারে বাড়ছে।