‘গত বছর কত সুন্দর ঈদগাহে সবাই একসাথে নামায আদায় করেছি, কিন্তু আজ পারলাম না একসাথে নামায পড়তে, পারলাম না কারো সাথে দেখা করতে। আগামী বছর বাঁচবো কিনা জানিনা, আবার সবার সাথে কবে একসাথে দেখা হবে তাও জানিনা।’


আজ সোমবার (২৫ মে) ছাগলনাইয়ার ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা গ্রামের পশ্চিম পাড়া বাইতুশ শরফ জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামায শেষ করে এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা জানাচ্ছিলেন আশি বছরের আবু বক্কর চৌধুরী। কথাগুলো বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিল।


তিনি বলেন, এক ভাইরাস এসে আমাদের সবাইকে এত দুর ঠেলে দিল। আজকে ঈদের নামাযের পর কোলাকুলিও করতে পারলাম না। আল্লাহর কাছে শুধু এই দোয়াই করেছি যাতে, এই ভাইরাস যেন দুর হয়ে যায়।


করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দুই মাসেরও বেশি সময় জুড়ে এক প্রকার বন্দীদশায় রয়েছেন দেশের মানুষজন। ভয়, উৎকণ্ঠা আর মৃত্যুর চিত্রে এ মহামারী বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনাচরণ, বদলে দিয়েছে সামাজিক বন্ধন, বদলে দিয়েছে চিরাচরিত রীতি। আজ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে নানা বিধি নিষেধের মধ্য দিয়ে।


ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা মুসলমানদের সার্বজনীন রীতি। সেই রীতিও এবার পরিবর্তিত হয়ে নতুন রূপ নিতে বাধ্য হল। এসব নিয়মকানুন আর বিধি নিষেধের বেড়াজালে বন্দী হয়ে থাকা ছাড়া কারো কোন উপায় নেই। তবু সবার মনেই তীব্র আকাঙ্খা, করোনা থেকে মুক্তি পাক দেশ, মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে আবার হাসিমুখে সব সজীব হয়ে উঠুক।


অহিদুন নবী জিন্নাহ (৫৭) নামে গ্রামের আরেক মুরুব্বি বলেন, ঈদে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করা হচ্ছে না এবার। তিনি বলেন, প্রতি ঈদেই শহর থেকে পরিবার পরিজনের কাছে ঘরে ফিরে আপনজনেরা। সবখানেই থাকত আনন্দময় পরিবেশ। এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা মানুষদের নিয়ে শংকায় দিন কাটাচ্ছি আমরা।


তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিষেধ করেছি মসজিদে না আসতে, ঘরে থাকতে। খারাপ লাগছে, কিন্তু কিছু করার নেই। কবে আবার সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরবো, তার কোন নিশ্চয়তা নেই।


ঘোপাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী বলেন, এবার আমরা এমন একটা ঈদ কাটাচ্ছি যা আমরা কখন ও ভাবিনি। সবাই একসাথে থেকেও কি যেন নেই আমাদের। গ্রামীন জনজীবনের ঈদের চিরচেনা রূপ যেন হারিয়ে গেছে।


তিনি করোনা মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ গুলোকে প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর কার্যক্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।


স্থানীয় সামাজিক সংগঠন নিজকুঞ্জরা মিতালী সমাজ কল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক রিয়ন বলেন, এ বছর ঈদ ঘরে থেকে পালন করছি। তিনি বলেন, পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠুক তাড়াতাড়ি।


নিজকুঞ্জরা হাই স্কুলের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী ইফরাত জাহান তমা বলেন, আমরা প্রতিবছর ঈদে কতো আনন্দ করে বেড়াতাম। বাড়ির সামনে ঈদের মেলা বসত। আমরা দলবেঁধে মেলাতে গিয়ে নানান রকম জিনিস কিনতাম। কিন্তু এবার করোনার কারণে সব বন্ধ। দ্রুত এই করোনা ভাইরাস দেশ থেকে চলে যাবে, সে প্রত্যাশা তারও।

সকলে তাকিয়ে আছেন সুদিনের দিকে। কবে এ দুর্যোগ দূর হয়ে জনপদ আবার কোলাহলে, হাসি, আনন্দ, আর মুখরিত প্রাণে উঠবে ভরে।