সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান‘ শক্তি হারিয়ে বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে বর্তমানে ক্যাটাগরি থ্রি (৩) পর্যায়ে রয়েছে। উপকূলের নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে ঘূর্ণিঝড়গুলোর শক্তি সাধারণত হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে সকল ক্ষেত্রে নয় বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ( ১৯ মে) বিকালে এ প্রভাবে ফেনীতে একপশলা বৃষ্টি হলেও এখন আর হচ্ছেনা। তবে থেমে দমকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।


আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তথ্য বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষেত্রে শক্তির হ্রাস-বৃদ্ধি আরো বেশ কয়েকবার ঘটতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি প্রচুর পরিমাণে মেঘ সঞ্চয় করে চলেছে এবং সমগ্র বাংলাদেশে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল সকাল পর্যন্ত দেশের মধ্যে বেশকিছু মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।


আবহাওয়াবিদরা ধারনা করছেন, ঝড়টি ধীর গতিতে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি টু(২) আকারে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি ঠিক কতটা শক্তি নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়বে নিখুঁত ভাবে বলা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে ঝড়টি ব্যাপক ধ্বংস ক্ষমতা নিয়েই উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কয়েক বছরের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেশি হতে পারে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হচ্ছে। তবে এখনও ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।


ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের আরেকটু কাছে এসেছে। উপকূল থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার (১৯ মে) শেষরাত হতে বুধবার ( ২০ মে) বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।


বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন আম্পান উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।


এ অবস্থায় মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।


উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।


অন্যদিকে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।


ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।


ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।


ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।