প্রকাশক, পাঠক ও লেখকের হতাশার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ফেনীর অমর একুশে বইমেলা। রাজাঝির দিঘীর পাড়ে আয়োজিত ৯ দিনব্যাপী বইমেলা ২১ শে ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে আজ (২৯ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়েছে।


আজ সন্ধ্যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান। এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম জাকারিয়া, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আকরামুজ্জমান, ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


৯ দিনব্যাপী চলা এ মেলা নিয়ে লাইব্রেরি, প্রকাশনী, পাঠক ও লেখকদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মেলায় বিভিন্ন স্টলের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিন থেকেই ভিড় জমানো মানুষের বেশিরভাগ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। মেলায় স্টলগুলোর পক্ষ হতে প্রশ্ন ওঠে মেলা প্রাঙ্গনের পরিবেশ ও পরিসর নিয়ে। কোন কোন স্টল মালিককে আশানুরূপ বিক্রিতে তুষ্ট হতে দেখা গেছে।


মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেনী লাইব্রেরির পরিচালক শওকত আলম সৈকত জানান, আমরা আগে জহির রায়হান হল মাঠে সাজিয়ে গুছিয়ে খোলামেলা জায়গায় বসতে পারতাম। এরপরে পিটিআই মাঠেও বড় স্টল নেয়ার সুযোগ ছিল। বড় স্টল হলে পাঠকরাও ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দের বই খুঁজে নিতে পারত।


তিনি বলেন, পিটিআই মাঠে আমরা একদিনে ১ লক্ষ টাকার উপরেও বিক্রি করেছি। কিন্তু এখানে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে আমাদের কষ্ট হয়ে গেছে। এখানে পাঠকদের থেকে হাঁটার মানুষ বেশি, পাঠকরা এখানে কমই আসে। নারীরা এখানে আসতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।


ফিরোজ লাইব্রেরি ম্যানেজার মোঃ রসুল আহম্মেদ বলেন, পিটিআই মাঠ থেকে এখানে বেচাবিক্রি ভালো। ওখানে বিকাল হলে ক্রেতা মিলত, এখানে সারাদিন পাওয়া যায়। সমস্যার কথাও বলেন রসুল আহম্মেদ। তিনি বলেন, এখানে পাঠকরা বিশেষ করে মহিলারা বই নিয়ে পড়তে পারছেনা। কিন্তু পিটিআই মাঠে অথবা জহির রায়হান হল মাঠে মেলা হলে তারা পড়ে দেখে নিয়ে যেতে পারত।


নারী পাঠকদের উপস্থিতি কম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে চারদিক থেকে উন্মুক্ত হওয়াতে অনেক মহিলা আসে না। যদি এখানে শুধু মেলার জন্য প্রবেশমুখ থাকত তাহলে বহিরাগতদের আসার সুযোগ থাকত না, নারীরাও আসত।


হোসেনীয়া লাইব্রেরীর সত্ত্বাধীকারী শেখ শাহ আলম বলেন, বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করলে সবার জন্য ভালো হত।


রাজাঝির দিঘীর পাড়ে বইমেলায় ইভটিজিং প্রসঙ্গে নারী পাঠকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। সায়মা আহমেদ চৌধুরী নামে একজন ফেসইবুকার মন্তব্য করেন, গতবার বইমেলা গিয়ে কমফোর্ট জোন পাইনি তাই এ বছর মেলা যাব না। একইসাথে তিনি দাবী করেন, গত বছর মেলায় ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।


তরুণ লেখক শাহরিয়ার আহম্মেদ সায়েম ও রাসিফ বিন ফাহিম বলেন, ফেনীর বইমেলা মূলত লাইব্রেরি মেলা। অনেকগুলো লাইব্রেরীর মধ্যে শুধুমাত্র একটি প্রকাশনী রয়েছে।
তারা বলেন, ফেনীতে প্রকাশনীর অভাবে আমরা তরুণ লেখকরা লেখার সুযোগ পাচ্ছিনা। আগামীতে আমাদের মতো যারা লিখতে চাইবে, তারা লিখা প্রকাশের জন্য প্লাটফর্ম খুঁজে পাবেনা।


শাহরিয়ার আহম্মেদ সায়েম বলেন, প্রকাশনী না থাকলে পরবর্তীতে অন্য বই লিখার জন্য যে অনুপ্রেরণা তা আমরা পাব না। ফেনীর বইমেলায় যদি লাইব্রেরীগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য প্রকাশনাগুলোর স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়, তাহলে বইমেলার যে রূপ তা সত্যিকার অর্থে প্রকাশ পাবে।


রাসিফ বিন ফাহিম বলেন, আমি ভাটিয়াল থেকে আমার বই প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমি আমার বই লাইব্রেরীগুলোতেও দিয়েছি কারণ এখানে সবাই লাইব্রেরীগুলো থেকে বই বেশি কিনে।


লেখকদ্বয় আগামীতে ফেনীর বইমেলা দিঘীর পাড়ে আয়োজন না করে বড় পরিসরে আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।