মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম আঞ্চলিক পাকা সড়ক।


ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার সময় সড়কে পড়ে থাকা মাটি বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে পড়ছে। ফলে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলছে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। বাড়ছে প্রাণহানীর শংকা। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এমনই চিত্র দেখা গেছে আঞ্চলিক এ সড়ক জুড়ে।


সরেজমিনে জানা যায়, ফুলগাজী হতে পরশুরাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ইটের ভাটা। ফসলি জমি হতে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিবহনের সময় রাস্তায় পড়ে থাকা মাটি বৃষ্টিতে পিচ্ছিল ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরী করেছে। রাস্তায় কয়েকটি যানবাহনও দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। একটি ট্রাক পিচ্ছিল রাস্তার পাশে গাছে আটকা পড়েছে। এছাড়া আরও একটি পিকআপ দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।


স্থানীয়দের অভিযোগ, কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে দেদারসে চলছে কৃষি জমির মাটি কাটা।


পরশুরাম উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক জমির উদ্দিন ভাবন বলেন, সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের ওপর মাটির আবরণ পড়ে আছে। যা আজ বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে কাদাটে হয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এ কারণে আজ সকাল হতে পরশুরামের প্রতিটি সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। গ্রামীণ সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে। সড়কে সকাল থেকে কয়েকজন মোটরবাইক চালকসহ পথচারী আহত হয়েছে।


ভুক্তভোগী একাধিক পথচারী বলেন, ইটভাটায় মাটি নেয়ার সময় সড়কে মাটি পড়ে। অসময়ের বৃষ্টিতে মাটির কাঁদা পানির সৃষ্টি হওয়ায় সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।


পরশুরাম সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বাদল বলেন, বৃষ্টির কারণে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে পড়ায় গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমার ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।


সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বলেন, সড়কের যে অবস্থা তাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

 

বক্সমাহমুদ ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, আমার এলাকায় খন্ডলে ২টা, প্রীতি ও সততা ৪টা ব্রিক ফিল্ড রয়েছে। এসব ব্রিক ফিল্ডগুলো এলাকা হতে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি গত দুই উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলাম।


চেয়ারম্যান বলেন, আমি আসার সময় দেখেছি ৪০/৫০ গাড়ি মাটি কাটার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করছে। মাটি পরিবহনের সময় পড়ে বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে সড়কের মারাত্মক আকার ধারন করেছে। গুথুমা থেকে বক্সমাহমুদগামী রাস্তা, তালতলা হতে খন্ডল হাই স্কুলের রাস্তার বেহাল দশা। এসব সড়কে ৮/১০ চাকার বড় বড় গাড়ি চলে। রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।


মাটি কাটার ব্যাপারে জানতে বক্সমাহমুদের কেবিএম ব্রিক ফিল্ডের মালিক মোশাররফকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা গাড়ি হিসেবে মাটি কিনি। আমাদের ব্রিক ফিল্ডে গাড়ি দিয়ে মাটি পৌঁছে দেয়। সরাসরি মাটি কম কিনি। তিনি বলেন, প্রশাসনের অনুমতিক্রমে আমরা পুকুর হতে মাটি কাটছি। আমরা দুপুরে পানি ঢেলে আমাদের ব্রিক ফিল্ডের সামনের রাস্তা আমরা পরিষ্কার করেছি।


উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, মূলত কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার সময় পিক আপ হতে রাস্তায় পড়ে এ অবস্থা হয়েছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।