সোনাগাজী সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদল নেতা উপর হামলায় ঘটনায় করা মামলার জেরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সোনাগাজী। গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) সোনাগাজীর জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম বাজার তাকিয়া রোডে ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে অর্ধ শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নূর।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে সোনাগাজী সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মিরাজ ও রায়হানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে মিরাজের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। মিরাজের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে জিরো পয়েন্টে এলাকায় সোনাগাজী সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঞা উপজেলা বিএনপিসহ ছাত্রদলের ও যুবদলের একাংশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে আশ্রয় দিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলে বাড়ি থেকে ধরে এনে উলঙ্গ করে পেটানো হবে। তার এই বক্তব্যের পরপর বিএনপি ও ছাত্রদলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে উঠে আসে।
অন্যদিকে গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) এই মামলায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসকে আসামি করার প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নূরের নেতৃত্বে মিছিল বের করে ছাত্রদলের একটি অংশ। মিছিলটি সোনাগাজী পশ্চিম বাজারের তাকিয়া রোডের সামনে এলে ছাত্রদলের অপর একটি অংশ তাদের উপর হামলা করে। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নূর আহত হয়েছেন দাবি করে বলেন, মিরাজের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে আমাদের দলের কিছু লোক ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে ছাত্রদলকে জড়িয়ে অপ্রচার করছে। তার অংশ হিসেবে উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসকে আসামি করে মামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় আমাদের উপর অতর্কিতে হামলা করা হয়েছে। মিরাজের উপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগের লোক জড়িত রয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের অন্তত অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে চরদরবেশ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ বলেন, অপর পক্ষ ছাত্রলীগ নিয়ে মিরাজ ও রায়হানের উপর হামলা করেছিল। আমরা মঙ্গলবার প্রতিবাদ সমাবেশ করে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। এরপর গতকাল তারা আবার ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিবাদী মিছিল করে। মিছিল পশ্চিম বাজারের দিকে এলে জসিম, রুবেল, রফিক ভাইদের এখানে পেয়ে তার হামলা শুরু করে, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এরপর আমরা খবর পেয়ে মাঠে অবস্থান করি।
হামলায় যুবদলের নেতা-কর্মী জড়িতের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের আহবায়ক খুরশিদ আলম জানান, ঘটনাটি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে সমাধান করা হবে। যুবদলের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন বলেন, ঘটনার বিষয়ে জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। কারা এতে জড়িত তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রদলের একটি অংশের দাবি, হামলায় পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক রিংকু, আসিফুল ইসলাম, কামরুল হাসান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, ইব্রাহিম, আবুল কালাম, নুর করিম, রাহাতুল ইসলাম, আবু ইউসুফ, আবুল কাসেম, নুর নবী, এনায়েত হোসেন, ওমর হাছান, রহমত উল্লাহ শাহীন, রফিক, জসিম উদ্দিন, জিহাদ রুবেল, সম্রাট, মতিউর রহমান মাসুম, মারুফ, সাজ্জাদ, সালাউদ্দিন, সজিব, শাহরিয়ার ইসলাম, সজিব হোসেন, পারভেজ, বাবর, মাসুদ, জিসান, রামিম, সবুজসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, এ সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ অভিযোগ করেনি।