নর্থসাইউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ফেনীর কৃতি সন্তান ও শিল্পপতি আজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) অন্যতম প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা। এর আগেও তিনি তিনবার এনএসইউ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এনএনইউ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ছোট্ট পরিসরে শুরু করেছিলাম। আর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এখন পরিচিত একটি নাম।

করোনাকালীন সময়ে এই ইউভার্সিটির বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে আজিম উদ্দিন আহামেদ বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রথম পথিকৃৎ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। আমরা যখন এটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করি, তখন সরকারের কাছেও এই সম্বন্ধে কোন ধারণা ছিল না। আমরা সেই ধারণাটা এনে সুন্দরভাবে অবকাঠামো তৈরী করেছি এবং আমরা সরকারকে বোঝাতে পেরেছি যে, আজকের বাংলাদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। আজকে বাংলাদেশের জনগণ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে কিভাবে গ্রহণ করেছে- সেটা সরকার ভালোভাবে উপলব্ধি করেছে। আর সেটা উপলব্ধি করেই সরকার বাংলাদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট করে। আর তখনই আমরা প্রথম এই দেশে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করি।

তিনি বলেন, যেখানে সামান্য কয়েকজন ছাত্র নিয়ে আমরা বনানীতে শুরু করেছিলাম, সেখানে আজকে বিশ্বজোড়া নাম করা একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হিসেবে আমরা বর্তমানে পরিচিত হয়েছি। এটা এত সুন্দর ও আধুনিক একটা ক্যাম্পাস করা হয়েছে, যেখানে ফ্যাকাল্তি এরিয়া ও আমাদের এডমিনিস্ট্রিটিভ বিল্ডিং আলাদা। এটা আমাদের নিজস্ব ভবন ও এটা প্রায় ১২ লাখ স্কয়ার ফুট ফ্যাকাল্তি এরিয়া আছে-যেটা সেন্ট্রালি এয়ার কন্ডিশনড। আমাদের লাইব্রেরি বিল্ডিং আছে আলাদা। আমাদের এডমিনিস্ট্রিটিভ বিল্ডিং আলাদা। আমাদের অডিটোরিয়াম আলাদা। আমরা সব ফ্যাসিলিটিজগুলো এখানে দিতে পেরেছি। আর সেজন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আজকে আমাদের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।

তিনি বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি একটি রিসার্চ বেইজড ইউনিভার্সিটি। বিশ্বের সমস্ত বড় ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের সমঝোতা চুক্তি আছে। আমেরিকাতে আমাদের একটি এডভাইজরী কাউন্সিল আছে। এটা আমেরিকাতে প্রতিষ্ঠিত ও বারাক ওবামার এ্যাডভাইজর পলওয়েল আমাদের এই এডভাইজরী কমিটির প্রধান ও চেয়ারম্যান। উনার নেতৃত্বে আমেরিকায় যারা বাংলাদেশী বা বিদেশী নাম করা শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই কমিটিটি যে করেছি, তারা আমাদের কারিকুলাম ডিজাইন ও উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশের এক মাত্র জেনোম ইউনিভার্সটি শুধু আমরাই করতে পেরেছি।

বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষার প্রখ্যাত পৃষ্ঠপোষক, বিশিষ্ট সমাজসেবক আজিম উদ্দিন আহমেদ তিনি মিউচুয়াল গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী ব্যাংক সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের স্পন্সর ডিরেক্টর এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী যিনি দেশের ৯টি কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় পদে ছিলেন।

একজন প্রগতিশীল আজিম উদ্দিন আহমেদ, ১৯৬০-১৯৬১ সেশনে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার জন্যে জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন। সে সময় তার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু এম.এ মান্নান (পরবর্তীতে মন্ত্রী) সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। আজিম উদ্দিন আহমেদ, এম এ মান্নান জীবিত থাকাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে তার সাথে নানা রকম আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

১৯৬১ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী জেনারেল আইয়ুব খানের মার্শাল ল ভঙ্গ করে আজিম উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে এম এ মান্নানের বাসায় একটি বড় আকারের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মিটিং থেকে বের হয়ে তারা মার্শাল ল এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে ব্যবসার উদ্দেশ্যে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় আসার পর ব্যবসার পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে কোন পদে না থেকেও বঙ্গবন্ধুর সাথে এবং আওয়ামীলীগের পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সাথে তার নিয়োমিত যোগাযোগ ছিলো।

১৯৬৯ সালে ঘরোয়া রাজনীতি উন্মুক্ত করার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে একই ফ্লাইটে সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। এরপর চট্টগ্রামস্থ হোটেল শাহজাহানে অবস্থান করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭০ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী মোহাম্মদউল্লাহ (পরবর্তীতে বাংলাদেশের ৩য় রাষ্ট্রপতি) সহ ফেনীতে সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফেনী স্টেশন রোডে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় জনাব মোহাম্মদউল্লাহ প্রধান অতিথি এবং তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও আজিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফেনী নির্বাচনী আসনে খাজা আহমদ এর পক্ষে সুবক্তা ও প্রধান বক্তা হিসেবে ২০/২৫ টি সভায় বক্তব্য রাখেন।

১৯৭১ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে ঢাকা চেম্বারের আয়োজনে (বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে) একটি সংবর্ধনা প্রধান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন আজিম উদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালের ৯ মাস ব্যাপী সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করে থেকে ব্যবসায়ি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ, পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে রনাঙ্গনে থেকেছেন।

এছাড়াও জনাব আজিম উদ্দিন আহমেদ ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশের গ্রেনেড হামলায় আহত নিহত অসহায় পরিবারদেরকে ওইদিন থেকে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

আজিম আহমেদ একজন ভ্রমণ উৎসাহী হিসাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ পরিদর্শন করেছেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একজন সম্মানিত নেতা হিসাবে, তিনি বারবার মেয়াদে বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থার নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন, ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ ইনডেন্টিং সমিতি, বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএবি) এর অন্যতম। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রাহক পণ্য প্রস্তুতকারক ও বিপণন সমিতির সভাপতি।

গুণী এ মানুষটি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার একটি অভিজাত মুসলিম পরিবারে ১৯৪০ সালের ৩০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা আজিম আহমেদ বিভিন্ন সামাজিক ও জনহিতকর কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িত। অত্যন্ত সামাজিক ও বিনীত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত খ্যাতিমান এই শিল্পপতি টানা বিভিন্ন মেয়াদে গুলশান ক্লাব, বারিধারা সোসাইটি এবং রোটারি ক্লাব নামে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক ভিত্তিতে অনেক স্কুল এবং মাদ্রাসার সাথে যুক্ত আছেন ।