ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেকের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। বৃস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা, বড় ভাই এবং মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান ও ছোট ভাই রাশেদুল হক রায়হান। তারা মামলাটির রায় দ্রুত কার্যকর করার কথা জানান। মা শিরীন আক্তার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তার মেয়েকে যারা পুড়িয়ে মেরেছে ওই আসামীদেরও তিনি একই রকম শাস্তি দাবী করেন।

পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নুসরাতের বাবা। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) কাজী মনিরুজ্জামান জানান, নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী নোমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। রায় যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ধন্যবাদ জানান।


মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু জানান, বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলাটি মাত্র ৬১ কার্যদিবসে নিষ্পত্তি হতে চলেছে। যা দেশের ইতিহাসে এ রায় নজিরবিহীন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালত মামলাটির রায় দেন। এ রায়ে আমরা সন্তোষ্ট। রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। আসামি পক্ষ ৭ দিনের মধ্যে আপিলের সময় পাবে।


প্রসঙ্গত; চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওইদিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সিরাজের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে রাফির পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে।

এক পর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কক্ষ থেকে ডেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তার শোর চিৎকারে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও পুলিশ এগিয়ে এসে উদ্ধার করে দ্বগ্ধ নুসরাতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয় নুসরাতকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের চিকিৎসার খোজ-খবর নেন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর কথা জানান। ১০ এপ্রিল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত।

গত ২৯ মে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির হোসাইন আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কমকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মো: শাহ আলম। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাত রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।