চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছিলেন ফেনীর গণমাধ্যমকর্মী জহিরুল হক মিলু। প্রথম ডোজ গ্রহণের ৫৬ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের জন্য মোবাইলে খুদে বার্তা (এসএমএস) আসার কথা থাকলেও গতকাল রবিবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত তিনি কোন এসএমএস পাননি বলে জানিয়েছেন। একই দিন সংবাদকর্মী সোলায়মান হাজারী ডালিমও প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন। তিনিও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করলেও জহিরুল হক মিলুর মোবাইলে দ্বিতীয় ডোজ নেবার জন্য এসএমএস আসে নি।

ইতোমধ্যে আজ সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ প্রদান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেও খুদে বার্তা না পাওয়া এবং দ্বিতীয় ডোজের জন্য একই বার্তা না আসায় টিকা পাবার বিষয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অনেকে। একাধিক ব্যক্তি এ বিষয়ে দৈনিক ফেনীকে তাদের সংশয়ের কথা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে চলতি মাসের ১৮ তারিখে করোনার প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ফেনী সংবাদদাতা আরিফুল আমীন রিজভী। নিবন্ধনের এক সাপ্তাহ পেরিয়ে তিনিও এখনও প্রতিষেধক গ্রহণের এসএমএস পান নি।

একই অবস্থা ফেনীর আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শাহজালাল রতনের। গত ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করার ৫৬ দিন পার হয়ে গেলেও তিনিও এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নেবার জন্য এসএমএস পান নি বলে জানিয়েছেন।

তাদের মত জেলায় আরও অনেকেও প্রথম ডোজ নেবার ৫৬ দিন পার হলেও দ্বিতীয় ডোজ নেবার জন্য এসএমএস পান নি। এছাড়া প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেও এসএমএস না আসায় টিকা নিতে পারছেন না অনেকে।

প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধনকারী শাহীন নামে এক ব্যক্তি জানান, ১৫ এপ্রিল করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেবার জন্য নিবন্ধন করেন। দশ দিন পার হলেও টিকা নেবার জন্য তিনি এসএমএস পান নি। আদৌ টিকা নিতে পারবেন কিনা সেটি নিয়ে তিনি শংকায় রয়েছেন।

এসএমএস না পাওয়ায় তার মত একই অবস্থা অন্য ব্যক্তিদের। এসএমএস না পাওয়া অনেকে যেমন প্রথম ডোজ নিতে পারছেন না, আবার অনেকে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে কোর্স সম্পন্ন করতে না পেরে মানসিকভাবে পর্যদস্তু হচ্ছেন।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্ভারে সমস্যার কারণে অনেক সময় এসএমএস না আসতে পারে। এ নিয়ে শংকার কোন কারণ নেই।

যারা এসএমএস পাননি তাদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: এসএসআর মাসুদ রানা। তিনি জানান, যারা দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস পেয়েছেন তারা এসে টিকা নেবেন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। যারা এসএমএস পাননি তারা ৭ দিন পর স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিভিল সার্জন ডা: মাসুদ রানা জানান, যারা প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করে এসএমএস পান নি তারা টিকা পাবেন না। পরবর্তী নির্দেশনা এলে তাদের টিকা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেও যারা এখন পর্যন্ত এসএমএস পান নি তারা নিবন্ধনের ফটোকপি স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দিলে কপিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো হবে। এরপর নিবন্ধনকারীর মোবাইলে এসএমএস আসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

জেলার করোনা পরিস্থিত সম্পর্কে সিভিল সার্জন জানান, জেলায় করোনা সংক্রমণের হার কমে আসছে, সেই সাথে মৃত্যুর হারও। আসন্ন ঈদের আগেই ফেনী জেনারেল হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংকের উদ্বোধন করা হবে। এটি চালু হলে ফেনীর করোনা চিকিৎসা সেবা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

আজ সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ প্রদান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের প্রথম ডোজ টিকা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ২১ লাখ ডোজ টিকা আসবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করছেন। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশে টিকার মজুত কমে আসছে।