নিয়ম না থাকলেও প্যাকেজ করে ফেনীতে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র ডিলাররা। এতে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উদ্দেশ্য, অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে না পেরে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষরা।

প্যাকেজ আকারে টিসিবির পণ্য অবৈধ বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারি পরিচালক সোহেল চাকমা। আজ বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) ভোক্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ট্রাংক রোড এবং সদর হাসপাতাল মোড়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।

সোহেল চাকমা জানান, প্যাকেজ আকারে পণ্য বিক্রি করতে ফেনীতে টিসিবিকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ডিলাররা যদি প্যাকেজ ছাড়া পণ্য না বিক্রি করেন তাহলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জানালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সহকারি পরিচালক।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফেনী শহরের রেলগেট, ট্রাংক রোড, সদর হাসপাতাল মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টিসিবির ট্রাকে ৮৫০ টাকা প্যাকেজ করে ৬টি পণ্য বিক্রি করছেন ডিলারের প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে ছিল ১০০ টাকা লিটার দরে ৪ লিটার তেল, ৫৫ টাকা দরে ২ কেজি করে ছোলা, মসুর ডাল ও চিনি, ৮০ টাকা দরে এক কেজি খেজুর এবং ২০ টাকা দরে ২ কেজি পেঁয়াজ। লকডাউনের মধ্যেও ক্রেতারা তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

তবে প্যাকেজ করে পণ্য বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। টিসিবির পন্য কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, টিসিবি থেকে ডাল, তেল ও চিনিসহ বাজার থেকে অন্যান্য পণ্য কিনতে তিনি বাসা থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তাকে টিসিবি থেকে ৮৫০ টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে তার অন্য পণ্য কিনতে টাকার ঘাটতি হবে বলে প্যাকেজে পণ্য বিক্রির ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

পণ্য কিনতে আসা কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার ছোলার প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে তাকে। গোলাম রসুল নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার চিনির প্রয়োজন নেই; কিন্তু প্যাকেজ ছাড়া ডিলারের লোকজন পণ্য বিক্রি করছেন না বলে সবই নিতে হচ্ছে।

প্যাকেজ করে কেন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে জানতে চাইলে ট্রাকের এক বিক্রয়কর্মীরা জানান, আমাদের সবকিছু সমন্বয় করে পণ্য বিক্রি করতে বলা হয়েছে, তাই করছি। তা না হলে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিক্রি হবে, আর অন্য পণ্যগুলো অবিক্রিত থেকে যাবে। কারা বিক্রি করতে বলছে তা জানতে চাইলে কোন উত্তর দেন নি তিনি।

তবে পেঁয়াজের স্টক শেষ হয়ে গেলে এ অবস্থা আর থাকবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, প্যাকেজ করে পণ্য বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। কোনো ডিলার এটা করে থাকলে তারা তা অন্যায় করছে। আমাদের কাছেও ইতিমধ্যে কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা তদারকিতে আছি। তবে এ ধরনের ডিলারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, পচনশীল পণ্য পেঁয়াজ। তাই পেঁয়াজ বিক্রির জন্য তারা হয়তো এ ধরনের পন্থা অবলম্বন করছেন। আগামী শনিবার থেকে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে। তখন হয়তো এ অনিয়ম থাকবে না।

গত ১ এপ্রিল রমজান উপলক্ষ্যে একটি ট্রাকে করে ফেনীতে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ কার্যক্রম চলবে ৬ মে পর্যন্ত।