ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে চলছে মাটির হরিলুট। কখনো ভূমি মালিককে দুই ফুটের টাকা দিয়ে কেটে নেয়া হয়েছে দশ ফুট। নুরুল আফসার, সামছুল হক, ওহিদুর রহমানসহ একাধিক ভূমি মালিক অভিযোগ করেন, বিক্রি না করলেও জোর করে কেটে নেয়া হয়েছে আবাদী জমির মাটি। এখানেই শেষ নয়, ঘটেছে হামলার ঘটনা। হামলা থেকে মামলা-পাল্টা মামলা।

অবৈধভাবে ও বলপূর্বক মাটি কাটা কেন্দ্র করে চলতি মাসের ৬ তারিখ রাতে ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বগইড় গ্রামে ভূমি মালিক ও স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষ হয় মাটি কাটতে আসা সংঘবদ্ধদের। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়।

উল্লেখ্য গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে কাশিমপুরে মাটি কাটার ঘটনায় সেচ প্রকল্পের ক্ষতি ও আবাদী জমির ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানায় বিএডিসি। মাটি কাটায় বাধা দেয়ায় কুপিয়ে আহত করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত বাবুল নামে এক ব্যক্তিকে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা অবৈধ মাটি কাটায় জড়িত।

কারা মাটি কাটছে এমন প্রশ্নে একাধিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসিফ পাটোয়ারী, যুবলীগ নেতা এনায়েত উল্যাহ মুন্না, ছাত্রলীগ নেতা জেমিসহ একটি চক্র মাটি কাটায় জড়িত।

তবে নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে আসিফ বলেন, মাটি ভরাটের মূল দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মানিক ও হাইওয়ে ব্রিকফিল্ডের মালিক আবদুল্লাহসহ আরও ৬জন। আমারা তাদের চাহিদামত বিভিন্ন জায়গা হতে মাটি কেটে এনে সেখানে ফেলেছি।

হামলার অভিযোগ এনে মাটি ব্যবসায়ী দুলাল মেম্বার স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল উদ্দিন স্বপনকে প্রধান আসামী করে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অন্যদিকে বলপূর্বক আবাদী জমির মাটি কেটে নিতে বাধা দেয়ায় হামলার অভিযোগ এনে একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর নবী খোকন বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড প্রতিনিধি স্বপন অভিযোগ করেন, এভাবে নির্বিচারে মাটি কাটার চিত্র ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজন বাধা দিয়েছে অথচ আমি এলাকায় না থাকলেও আমায় আসামী করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে কথা বলি বিধায় হামলাকারীদের শত্রু হয়েছি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর, তেমুহনি, মাথিয়ারা, হাইওয়ে ব্রিকফিল্ডের সামনে, বগইড়, ইলাশপুর, বিরলীসহ একাধিক স্থানে চলছে অবাধে আবাদী জমির মাটি কাটা।

তবে মাটি কেনায় নিজের সম্পৃক্ততা প্রত্যাখ্যান করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক দৈনিক ফেনীকে জানান, তিনি মাটি কাটা এবং ভরাটের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

সরকার দলীয় নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
অবৈধভাবে ফসলী জমির মাটি কাটার প্রধান অভিযোগ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসিফ পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে। মাটি ব্যবসায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অকপটে স্বীকার করলেও আসিফ দাবী করেন, অনাবাদী জমি থেকেই মাটি কাটা হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা অভিযোগ প্রসঙ্গে আসিফ বলেন, নেতাদের প্রয়োজনেই মাটি কাটা হয়েছে। তাদের ঠিকাদারীতেই মাটি সরবরাহ করা হয়েছে।
আসিফ আরও বলেন, আমরা হুকুম পালন করেছি। আমরা মাটি কাটার ছোটখাট কাজ করি। ঠিকাদার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবে কাজ করি। পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের হাইওয়ে ব্রিকফিল্ডের পাশে বিদ্যুৎ গ্রীডের নির্মিতব্য সাব স্টেশনের জায়গা ভরাটের জন্য প্রচুর মাটির প্রয়োজন ছিল। স্টেশনের জায়গায় মাটি ফেলে ভরাট করার জন্য বেশ কয়েকজন কাজ করেন। তবে মাটি ভরাটের মূল দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক ও হাইওয়ে ব্রিকফিল্ডের মালিক আবদুল্লাহসহ আর ৬ ব্যক্তি।

তিনি আরও বলেন, জায়গা ভরাটের দায়িত্ব আমি নেই নি। যারা ঠিকাদার তাদের নির্দেশনা অনুসারে মাটি কেটে এনে এখানে ফেলেছি। এক্ষেত্রে আমি একা দায়ী নই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার নাম বারবার উঠে আসছে। মাটি কাটার সাথে আরও জড়িত ছিলেন সিরাজ মিয়া, সালেহ আহম্মদ, জিল্লু, বিপু ও আমির। জায়গাটি ভরাটের জন্য যে মাটি আনা হয়েছে তা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়েছে, অন্য কোথাও হতে আনা হয়নি। বর্তমানে সাব স্টেশনের মাটি ভরাট অংশের উপরিভাগে বালি দেখা গেলেও নিচে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মানিক। তিনি বলেন, মাটি সংক্রান্ত কোন কিছুতেই আমার সম্পৃক্ততা নেই। এটি এলাকার সকল মানুষের জানা। পাওয়ার গ্রীডের মাটি ভরাট প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ ধরনের কোন ঠিকাদারী তিনি করেন নি। তিনি বলেন, যারা এসব বলছে তারাই মাটি কেটে বিক্রি করছে।

অবশ্য হাইওয়ে ব্রিক ফিল্ডের মালিক মো: আবদুল্লাহ জানান, পাওয়ার গ্রীডের উন্নয়ন কাজ ইউপি চেয়ারম্যান মানিকসহ মোট ৬জন মিলে করেছেন। এতে আরও জড়িত আছেন শাহজালাল, দুলাল মেম্বার, সালেহ আহাম্মদ, আবদুল খালেক। তিনি মাটি ভরাটের সত্যতা স্বীকার করে জানান, তারা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মাটি কিনে পাওয়ার গ্রীডের উন্নয়ন কাজের জায়গাটি ভরাট করেন।