আজ ৬ এপ্রিল। ২০১৯ সালের এ দিনে সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের ছাদে নিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ উন্মত্ত বর্বরতার শিকার হয়ে নুসরাতের শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। এর ৪ দিন পর ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত। ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হলেও দিনটি আজও ফেনীর মানুষের মনে দাগ কেটে আছে।

এ ঘটনায় একই বছরের ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান থানায় মামলা করে। তারও আগে ২৭ মার্চ যৌন হয়রানির শিকার হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিলেন নুসরাতের মা শিরীন আক্তার। পরদিন আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয় তাকে। কারাগার হতেই হত্যার নীল নকশা তৈরী করে সিরাজ-উদ-দৌলা।

একই বছরের ২৪ অক্টোবর ৮৭ সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে মাত্র ৬২ কার্যদিবসে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। মামলায় চার্জশীটভূক্ত ১৬ অভিযুক্তের সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়, সাথে এক লক্ষ টাকা করে দন্ড।

নুসরাত হত্যাকান্ডে ক্ষোভে উত্তাল হয় সারাদেশ। ফেনী যেন আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ। সারাদেশ মিছিল, মিটিং, শ্লোগানে প্রকম্পিত। দৃষ্টি এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রীর। কঠোর ভাষায় বিচারের ঘোষণা দিলেন, নুসরাতের পরিবারকে কাছে টেনে নিলেন। বললেন, অপরাধী যেই হোক, ক্ষমা নয়। বিচার হলো, তবে নুসরাত রেখে গেল উদাহরণ। অন্যায়ের কাছে মাথা নত নয়, পিছপা নয়। একটি চিঠিতে নিজের জীবন দিয়ে হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদের ঘোষণা করেছিলেন।

নুসরাত জাহান রাফি নৃশংস হত্যাকান্ড দুই বছর পেরিয়ে গেলেও অমলিন রয়ে গেছে ফেনীর মানুষের মনে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এখনও উচ্চারিত হয় নুসরাতের নাম প্রতিবাদের অগ্নিবালিকা স্বরূপ।

তার মা ভুলেননি কোনোকিছুই। এখনও কাঁদেন আগের মত, যেখানে দুই বছর আগে কেঁদেছেন। তিনি বলেন, দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো দু’চোখ এক করলেই ভেসে উঠে মেয়ের মুখ। উচ্চ আদালত পানে তাকিয়ে থাকা শিরীন আক্তার বলেন, আমরা উচ্চ আদালতের দিকে চেয়ে আছি, শুনেছি আসামীরা আপীল করেছে। আশা করছি আসামীদের ফাঁসির রায় বহাল রাখা হবে।

নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়ায় মেজো মৌলভী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছে নুসরাত।