জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২১ মার্চ) নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজজামান। সভায় শহরের জলাশয় ভরাট রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, কৃষি জমির টপ সয়েল কর্তন, খাদ্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল রোধ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিশুদ্ধ পানি সংকট নিরসনে নলকূপ স্থাপন, সড়ক সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় শহরাঞ্চলে জলাশয় ভরাট রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ফেনীতে সুইমিং পুল আছে কিন্তু পানি নেই। শহরের সব মার্কেটগুলো পুকুর ভরাট করে হয়েছে। এটি পরবর্তীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মাটির নিচে পানির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, এতে করে শহর মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। এতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। জলাধার ভরাট রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি ভরাট রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক বলেন, দিন দিন নদী, খাল, পুকুর হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পুকুরে বর্জ্য ফেলা খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, শহরের মশার উপদ্রব কমাতে ও সৌন্দর্য রক্ষা করতে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অনুরোধ করেন তিনি। এসময় জেলি মিশ্রিত মাছ বাজারজাতকরণ ও জাটকা মাছ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন জেলা প্রশাসক।
সভায় জেলা প্রশাসক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড রাস্তা ভাঙ্গলে, এলজিইডির রাস্তাগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কার করে না। খারাপ রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি।

সভায় খাদ্যপণ্যের উর্ধ্বগতি রোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। জেলা প্রশাসক বলেন, এক পন্যের দাম বড় বাজারে একরকম অন্য জায়গায় আরেক রকম। কেন পন্যর দাম বাড়ছে তার কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, সামনে রোজা আসছে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষকে জিম্মি করা যাবে না। দাম বাড়ার কারণ নিয়ে অতিসত্ত্বর ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন চিনি। এছাড়া খাদ্য ভেজাল রোধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। এসময় ভেজাল রোধে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে কাজ করার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

সভায় জানানো হয়, ফসলি জমির টপসয়েল কাটা রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব কৃষক প্রণোদনা পায়, তাদেরকে মাটি কাটা রোধে বাধ্য করতে হবে। এছাড়া অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়াও ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিরসনে নলকুপ স্থাপনে ব্যবস্থা নিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে প্রতি ১০টি ঘরের জন্য একটি করে নলকূপ স্থাপন করতে বলেন জেলা প্রশাসক।

রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, অনেক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারি জায়গা বিক্রি করে দেয় অথবা অন্য কাওকে ব্যবহার করতে দেয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সকল দপ্তর প্রধানদের সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।

সভায় অগ্নি দূর্ঘটনা প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।
ফেনী ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী বিগত কয়েক মাসে ২৬টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ও ৭টা অন্য দুর্ঘটনা হয়েছে। এসময় সিএনজি অটোরকিশায় থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার অপসারণে পৌরসভাকে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান জেলা প্রশাসক।
সভায় ফুটপাত দখল বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ফুটপাতে অবৈধ ব্যবসা করে কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে বলে গরীবের পেটে লাথি মারছি আমরা। অবৈধভাবে রাস্তায় বসা অপরাধ। সে যে হোক অপরাধী। তিনি বলেন, যত্রতত্র মল-মুত্র ত্যাগ করা হয়। এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পৌরসভাকে গণশৌচাগার নির্মাণ ও পুরাতনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিতে বলেন তিনি।

ভুয়া ঔষধ নির্মুলে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব ঔষধ বিক্রয় নিষিদ্ধ সেগুলো বন্ধ ব্যবস্থা নিতে হবে। ঔষধে দাম বেশী রাখায় ঔষধ কিনে সবাই প্রতারিত হচ্ছে। ঔষধের দাম বেশী রাখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঔষধ প্রশাসনকে সচেষ্ট থাকার আহবান জানান তিনি। সভায় ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ফার্মেসীতে কিছু ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে সেগুলো নির্মুল এ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঔষধ প্রশাসনকে আহবান জানান বক্তারা।

সভায় রেলওয়ের সৌন্দর্যে বৃদ্ধিতে রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হওয়ার সম্মুখে রাস্তায় পানি জমে থাকে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, জমে থাকা পানি নির্মূল করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন এর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পৌরসভাকে আহবান জানান জেলা প্রশাসক। এসময় রেলওয়ে দূর্ঘটনা এড়াতে গেইটম্যানকে আরও সতর্ক করার জন্য নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ গোলাম জাকারিয়ার সঞ্চালনায় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল, সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর কামরুন নাহার, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আবু দাউদ মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রবিউল ইসলাম, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিমুল্লাহসহ ফেনী সকল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সকল সরকারি দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।