আসন্ন সোনাগাজী পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ। দল হতে মেয়র-কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী দেয়া হলেও প্রায় সব ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ১৮ বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রবিবার (২১ মার্চ) বৈঠক করা হবে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক। তিনি জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক একে শহীদ খোন্দকার ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন এতে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।

দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহযোগি সংগঠনের এক নেতা বলছেন, গত আট বছর ধরে দলকে সুসংগঠিত করতে নিরলস কাজ করেছি। দলীয় মিছিল, মিটিং, সমাবেশে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু নির্বাচন এলে মনোনয়ন নেবার সময় দেখা গেছে অতিথি পাখিদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাই এর প্রতিবাদে মনোনয়ন জমা দিয়েছি।

আট নম্বর ওয়ার্ড হতে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা দেয়া বর্তমান প্যানেল মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কলিমুল্লাহ রয়েল। তিনি বলেন, ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবিতে মনোনয়ন কিনেছি। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও আরও দুই প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

৬ষ্ঠ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন পেয়ে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. রফিকুল ইসলাম খোকন মনোনয়ন দাখিল করেছেন। অন্যদিকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত সাবেক প্যানেল মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা নুর নবী লিটন ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সেলিম মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

এছাড়াও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর পদে জেলা আওয়ামী লীগ ১২জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলেও মনোনয়ন দাখিল করার পর দেখা গেছে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

পৌর এক নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী মো: মোস্তফা ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিন চৌধুরী, মো: শাহজাহান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। একইভাবে চার নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত আব্দুল আল মমিন ছাড়াও আজগর হোসেন, আতিকুর রহমান, বেলায়েত হোসেন নামে তিন আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত নাসির উদ্দিন রিপন ছাড়াও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান সাজু, বাহার উল্যাহ নামে দুইজন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ছয় নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত আইয়ুব আলী খান ছাড়াও মহিন উদ্দিন, আব্দুল হাই, সাত নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত শেখ আব্দুল হালিম মামুন ছাড়াও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন নয়ন, এনায়েত উল্যাহ, আট নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত জহির উদ্দিন ছাড়াও শেখ কলিমুল্লাহ রয়েল, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: ফারুক, নয় নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত আকবর হোসেন ছাড়াও যুবলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত দুই নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত তাসমীম আক্তার ছাড়াও দিল আফরোজ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

তবে মনোনয়ন জমাকৃত প্রার্থীদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কোন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন নি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে শুক্রবার (১৯ মার্চ) ৪৩ প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৬ জন হচ্ছেন মেয়র প্রার্থী, আর বাকী ৩৭ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী।
মেয়র পদে উপরোক্ত ৩ জন ছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ মো: হিজবুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা এড. হেদায়েত উল্যাহ ও ব্যবসায়ী আবু নাছের মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এড. রফিকুল ইসলাম খোকন দৈনিক ফেনী‘কে বলেন, যারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রার্থী হয়েছেন আশা করব তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সম্মান জানিয়ে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে দলীয় স্বার্থে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেবেন।

তবে দলের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী নুর নবী লিটন জানিয়েছেন, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বাবুল বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমিও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি বলে জমা দেই নি।

এতজন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ (রবিবার) দলীয় সভা রয়েছে। এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজী হন নি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মইনুল হক দৈনিক ফেনী‘কে জানান, মনোনয়ন যাচাই বাছাই শেষে ঋণ খেলাপি থাকায় ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিন ৪৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। আগামী বুধবার (২৪ মার্চ) বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে। পরদিন ২৫ মার্চ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। আগামী ১১ই এপ্রিল নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে।