বলা হয়েছিল জনপ্রতি ২ বছরের জন্য সহজ শর্তে ২ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণ পেতে হলে প্রত্যেককে ঋণের ১০ শতাংশ জামানত স্বরূপ অগ্রীম জমা দিতে হবে। সদস্য হতে হলে প্রতি সাপ্তাহে একশ টাকা করে সঞ্চয় লাগবে। এমন শর্ত মেনে দাগনভূঞায় নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করেছে ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি নামসর্বস্ব এনজিও প্রতিষ্ঠান। প্রতারিত হয়েছেন এমন ৩৬ জনের নামে তালিকা দৈনিক ফেনীর হাতে এসেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, প্রতারিত হয়েছেন আরও ৩ শতাধিক ব্যক্তি, যাদের সবাই নারী। ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, মোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায়, প্রতারিত ৩৬ জন ঋণের আশায় সর্বনি¤œ ৩ হাজার টাকা হতে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন “সকস বাংলাদেশ” নামের ওই এনজিও প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ঋণ প্রদানের নির্ধারিত তারিখ গত মঙ্গলবার (২ মার্চ) জামানতকারীরা গিয়ে দেখেন প্রতিষ্ঠানটির অফিস তালাবন্ধ। খোঁজ মিলছে না ‘সকস বাংলাদেশ’ এনজিও নামে প্রতারক চক্রটির কোন কর্মীর।

এ ঘটনায় গতকাল দাগনভূঞায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসিনা মমতাজ (৩৫) নামে দাগনভূঞা পৌরসভার রামানন্দপুরের মিন্নত আলী পন্ডিত বাড়ির এক মহিলা।

অভিযোগপত্রে দুইজন আসামীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামী করা হয়েছে দাগনভূঞার আমান উল্লাহপুরের স্বপন হোটেলের মালিক স্বপন (৫০), যিনি এনজিও প্রতিষ্ঠানটিকে ঘর ভাড়া দিয়েছিলেন। অপর আসামী হচ্ছেন এনজিওটির দাগনভূঞার শাখার ব্যবস্থাপন রানা (৪০), যার ঠিকানা নিশ্চিত করতে পারেন নি ভুক্তভোগী ও ভবন মালিক পক্ষের কেউ।

জানা গেছে, গত এক মাস যাবত এনজিওর কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও ১৫দিন আগে রানা নামীয় ওই ব্যক্তি স্বপন হোটেলের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলেন। দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতারণার শিকার হাসিনা মমতাজ বলেন, বিগত এক মাস ধরে রানা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে সহজ শর্তে ও স্বল্প কিস্তিতে ঋণ দেবার কথা বলে। ঋণ নিতে হলে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে বলে আমাদের জানায় এবং গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র প্রধানদের নিয়ে তার অফিসে বৈঠক করে। এসময় স্বপনকে এনজিওটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে আমাদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে। তাদের কথায় আশ^স্ত হয়ে আমি ২ লাখ টাকা ঋণ নেবার জন্য রানাকে ২০ হাজার টাকা জামানত প্রদান করি। আমার মত অনেকেই বিভিন্ন পরিমাণ ঋণ নেবার জন্য তাকে টাকা প্রদান করে। পরে গতকাল ঋণ নেবার জন্য তাদের অফিসে গিয়ে দেখতে পাই সেটি তালাবন্ধ। এরপর বেশ কয়েকজন কেন্দ্র প্রধানকে সাথে নিয়ে আমি ফেনীর পাগলা মিয়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ চালিয়েও প্রতিষ্ঠানটির কোন প্রধান শাখার সন্ধান পাইনি।

মমতাজ আরও বলেন, জামানত প্রদানকারীরা সকলে দিনমজুর। ছোটখাট ঋণ নিয়ে ব্যবসা করবে সেজন্য এই খপ্পরে পড়লাম। আমরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে জামানতের টাকা জমা দিয়েছিলাম।

খবর পেয়ে গতকাল বিকালে ঘটনাস্থলে এসে অফিসটি সীলগালা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া। তিনি জানান, এ ব্যাপারে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া উপজেলায় আর কোন নামসর্বস্ব এনজিও প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেলে অভিযান চালানো হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, অভিযোগ পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ ব্যাপারে থানায় প্রতারণা মামলার প্রক্রিয়াধীন। তবে এখন পর্যন্ত প্রতারকদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারে নি। ঘটনাস্থলে বাড়ির মালিককে পাওয়া যায় নি। তাকে পেলে এ ব্যাপারে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুল ইসলাম জানান, ফেনীতে সকস বাংলাদেশ নামে কোন প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন রয়েছে বলে মনে পড়ছে না।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত বছরের ৭ জানুয়ারি ভোলায় গ্রাহকদের সাথে একই ধরনের প্রতারণা করে উধাও হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি।