সোনাগাজীর চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ একটি সম্ভাবনাময় কৃষি হিসেবে আলোচিত হচ্ছে এবং কৃষকদের আকৃষ্ট করছে। এর প্রধান কারণ হল, একসময় রবি মৌসুমে খালি পড়ে থাকা জমিগুলো এখন লাভের মুখ দেখাচ্ছে কৃষকদের। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছে তরমুজ চাষে।

তবে কৃষক এবং কৃষি উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, কৃষিতে সরকারের ব্যাপক প্রণোদনাসহ উন্নয়ন প্রকল্প থাকলেও ফেনীতে তরমুজ চাষিদের জন্য নেই কোনো সরকারি সহযোগিতা।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, সোনাগাজীর চরদরবেশ, চরচান্দিয়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের প্রায় ৩১৭ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে তরমুজ। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণেরও বেশি। গত বছর তরমুজ চাষে অধিক লাভ পাওয়ায় এবার বৃহৎ পরিসরে চাষ করেছেন কৃষকরা। পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালীর কৃষকরাও এখানে এসে জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ চাষ করছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্রনাথ জানান, ফেনী জেলায় কেবল সোনাগাজীতেই তরমুজের চাষ হয়। সোনাগাজীর চরাঞ্চলের আবহাওয়া তরমুজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চারা রোপণ করা হয়। এর পরিচর্যা খরচও তুলনামুলক কম। আশি হতে একশ দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রয়ের উপযুক্ত হয়।

তিনি আরও জানান, এ বছর উপজেলার ১৬০ হেক্টর জমিতে ভিক্টর সুগার জাত , ১২২ হেক্টর জমিতে ওশান সুগার জাত, ব্ল্যাক বেরী এবং অনান্য তরমুজের জাত ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি তরমুজের ফলন হয় ৪৫ হতে ৬০ টন। বিঘা প্রতি খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা এবং আয় হয় ৯০ হাজার টাকার মত। কৃষকরা পাইকারদের কাছে সম্পূর্ণ ক্ষেত বিক্রি করে দেন এতে করে বিক্রির ঝামেলাও পোহাতে হয় না।

কৃষক আবু তাহের বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানে তরমুজ কিনতে আসে। বিশেষ করে নোয়াখালী, ফেনী শহর, ঢাকা, চট্টগ্রামের পাইকাররা এখান থেকে তরমুজ কিনে নিজনিজ স্থানে সরবরাহ করে।

কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে। আমজাদ হোসেন নামে একজন কৃষি উদ্যোক্তা জানান, রাস্তাঘাট অনুন্নত হওয়ায় বাজারজাতকরণে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, চরদরবেশ ইউনিয়নের কাদের মিয়ার খামার বাড়ি থেকে ৮ নম্বর স্লুইচ গেইট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা এবং খানাখন্দে ভরা। যা গাড়ি চলাচলের জন্য অনুপযোগী। ফলে পরিবহণ ব্যয় বেড়ে গেছে। রাস্তাটি সংস্কার করা হলে তরমুজ বাজারজাতকরণ করা সহজ হবে।

কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষক কামরুল ইসলাম ভুট্টু দর দরবেশ ইউনিয়নে দুই একর জায়গাজুড়ে তরমুজ চাষ করছেন। পড়ালেখা শেষ করে মনোনিবেশ করেন কৃষিতে। তরমুজ চাষের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও মানুষের মাঝে এর লাভ সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য নেই তাই চাষাবাদ আশানুরূপ নয়। তবে ফেনীতে অপ্রচলিত এ কৃষিকে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা আশা করেন। তিনি বলেন, আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে তরমুজ চাষ করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার আশা করে কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, তরমুজ চাষের জন্য সার, বীজ বা অন্য কোন প্রণোদনা সরকার না দিলেও কৃষি বিভাগ চাষীদের সবসময় পরামর্শ ও তথ্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।