ফেনী সদরের কালিদহ ইউনিয়নে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে মেশিনের সাহায্যে জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ধানের চারা রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান বলেন, খাদ্য সংকট মোকাবিলা করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা অল্প সময়ে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবে। তাদের যদি প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তাহলে আমাদের খাদ্য চাহিদা পূরণে কোন সমস্যা হবেনা।

সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ পদ্ধতি খুবই আধুনিক ও ফলপ্রসূ প্রযুক্তি। কৃষি সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য আমাদের কৃষকদের ও কৃষিকে ভালোবাসতে হবে। এলাকাভিত্তিক সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে কৃষকদের যে কোন সমস্যা সমাধান ও চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বহির্বিশ্বে সমবায় চাষাবাদ পদ্ধতি কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানার সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আহসান হাবীবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক মোঃ তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবু তাহের, বিশিষ্ট শিল্পপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এস শাহুদুল হক বুলবুল, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার, কালিদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার, কাজীর বাগ ইউপি চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক মোঃ তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি চাষাবাদের আধুনিক পদ্ধতি। পরীক্ষামূলকভাবে সদর উপজেলার ৫০ একর জমিতে প্রদর্শনী ব্লকের মাধ্যমে আবাদ কার্যক্রম চলছে। এই পদ্ধতিতে সফলতা পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে সকল আবাদি জমিতে সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবে।
অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবু তাহের বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে জমিতে চারা রোপণ করতে সময় লেগে যায় ৩০ হতে ৩৫ দিন। সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও রোপন করতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন। তুলনামূলকভাবে এই পদ্ধতিতে কম সময়ে চাষাবাদ শুরু করা যায়। এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ করা হলে উৎপাদন ভালো হয়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমলয়ে চাষাবাদ প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কালিদহ ইউনিয়নের ভালুকিয়া ও আলোকদিয়া গ্রামের ৫০ একর জমিকে ব্লক প্রদর্শনীর আওতায় এনে চাষাবাদ চলমান রয়েছে। নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় কৃষকদের বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সেজন্য কৃষি বিভাগ নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এই অঞ্চলে বোরো আবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রদর্শনীর জন্য জমি নির্ধারণ করলে স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহুদুল হক বুলবুল সেচের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

সাবেলা খাতুন নামে এক কৃষাণী বলেন, মেশিনের সাহায্যে চারা লাগানো যায় এটা এই প্রথম দেখলাম। আগে জমিতে ধানের চারা রোপন করতে বিভিন্ন জেলার শ্রমিকদের আনা হত। এই পদ্ধতিতে শ্রমিক ছাড়া অনেক কম খরচে চারা রোপণ করা যাচ্ছে।

মোঃ ইউছুপ নামের এক কৃষক বলেন, কৃষি বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী ফলন পেলে আমরা এ পদ্ধতিতেই চাষাবাদ করবো। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার ও এর উপকারিতা নিয়ে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।