নিজে বর্তমান জনপ্রতিনিধি হলেও তার স্ত্রী সালমা তাহিনুর পাচ্ছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা। ছেলে নাভিদুল হাসানের পিতৃপরিচয় গোপন করে গ্রহণ করছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। দুই শ্যালিকা উম্মে রুমান ও উম্মে কুলসুম বিবাহিত জীবন যাপন করলেও পাচ্ছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা। শশুর নুরেজ্জমান ও শাশুড়ি বিবি আয়েশা পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা, বউয়ের বড় ভাই আনিসুজ্জামানের জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, আনিসুজ্জামান বাক প্রতিবন্ধী। এমন সব তথ্য উঠে এসেছে দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারের ভাতা সেবা নিয়ে এমন সব কীর্তিকলাপের হোতা ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ড (জগতপুর) মেম্বার কামরুজ্জামান (কামরুল)। একসময় বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা।

অভিযোগ এসেছে, পরিবারের বাইরে যারা ভাতা সুবিধা ভোগ করছে তারাও কামরুজ্জামানের পছন্দের। অর্থাৎ তার পছন্দের মানুষ হলেই মিলবে ভাতা কার্ড। ফলে যাদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সরকার ভাতা দিচ্ছে, তারা না পেয়ে পাচ্ছে অন্যরা।

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ মজুমদার অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডে এমন অনেকে আছেন ভাতা পাবার যোগ্য কিন্তু পাচ্ছেন না। এমনও অভিযোগ রয়েছে, এক বছরের টাকা প্রদানের শর্তে কিছু লোককে বয়স্ক ভাতা কার্ড দিয়েছেন কামরুজ্জামান।

এত অনিয়ম আর দুর্নীতি প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান জানান, ওয়ার্ডের সকল প্রাপ্য ব্যক্তিকে ভাতা কার্ড দেয়ার পর পরিবারের সদস্যদের জন্য তা গ্রহণ করেছেন তিনি। নিজের ছেলেকে প্রতিবন্ধী লিপিবদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০১৮ সালের পূর্বে সে রিকশা থেকে পড়ে হাত ভেঙেছিল তাই প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছে। তবে ছেলের পিতৃপরিচয় গোপনের কারন জিজ্ঞেস করলেও তিনি উত্তর দেননি।

শ্যালিকা উম্মে কুলসুম ও উম্মে রুমানের স্বামী যথাক্রমে মোঃ কাইয়ুম এবং জিয়া উদ্দিন চৌধুরীকে জীবিত থেকেও মৃত দেখানো প্রসঙ্গে দুই বোন বলেন, ভাতা কিভাবে পাচ্ছেন তা জানেন না। তারা ভাতার আবেদন করেন নি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন মিয়া জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে সতেরো জনের একটি যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে ভাতা কার্ডের জন্য নাম চুড়ান্ত হয়। এতে বারোজন ইউপি সদস্য ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধি, সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিনিধি এবং পরিষদের সচিব কমিটিতে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকেন।

যাচাই প্রসঙ্গে হারুন মিয়া বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর প্রতিটি আবেদন উন্মুক্ত পর্যালোচনা করি। আমার পূর্বে কিভাবে এগুলো হয়েছে তা জানা নেই। উল্লেখ্য কার্ডগুলো ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ইস্যু করা হয়েছে।

যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার এমন বিষয় জানা নেই বলে জানান। সভাপতির দায়িত্ব কতটুকু পালন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজসেবা এ কাজটি করে থাকে।

কমিটির কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেম্বাররা স্ব স্ব ওয়ার্ড হতে সম্ভাব্য উপকারভোগীর তালিকা দিয়ে থাকেন। সবসময় তা যাচাই করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না।

কামরুজ্জামান একসময় ফুলগাজী উপজেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও বর্তমানে তিনি দরবারপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার।

প্রয়াত চেয়ারম্যান একরামুল হকের গাড়িবহরে হামলায় দায়েরকৃত মামলার আসামী কামরুজ্জামান ২০১৫ সালে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দল পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজনীতির প্রয়োজনে দল পরিবর্তন করেছি।

সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৭১৭ জন ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন। তন্মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৪ হাজার ২৩জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাচ্ছেন ১ হাজার ৯৬০জন এবং প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন ১ হাজার ৭৩৪জন।