ফেনী শহরের দেবীপুরে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে জায়গা, চিকিৎসার সরঞ্জাম, টেকনোলজিস্ট, চিকিৎসক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরিত লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন ফরমে দেয়া হয়েছে এসব তথ্য। বাজারে শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনাও চলছে। কিন্তু দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির আসল চিত্র। কাগজে-কলমে এসবের অস্তিত্ত্ব থাকলেও, বাস্তবে এর কোন কিছুই চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র নামসর্বস্ব হিসেবে রয়েছে ফেনী সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (প্রা: লি:)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চার হাজার বর্গফুটের ল্যাব ফ্লোর, এমআরআই, মেশিন, ডাক্তার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আবেদনে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের নাম ও মোবাইল নম্বর থাকলেও তারা জানেন না টেকনোলজিস্ট কি কাজ করে। পরিবেশ ছাড়পত্র, ভ্যাট সার্টিফিকেট আছে বললেও এমন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। আর এসব কান্ডকীর্তির মূলে ফেনী সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (প্রা: লি:)।

শহরতলীর দেবীপুরের ঠিকানায় গিয়ে জমি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কেফায়েত উল্লাহ মামুন জানালেন, এখনই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ছেন না, পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত হবে। কথার একপর্যায়ে দৈনিক ফেনী পরিচয় পেয়েই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরিত লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন ফরমে দেয়া তথ্য অস্বীকার করলেন তিনি।

আবেদনে প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে উল্লেখ করলেও এ নামে কোনো আবেদন পাননি বলে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক সাইদুর রহমান। একইভাবে ফেনী শুল্ক ও আবগারী দপ্তরের সদর সার্কেল রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, উল্লেখিত নামে ভ্যাট সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়নি।

আবেদনে তিনজন মালিক পক্ষের আরেকজন মুজাহেরুল ইসলামও প্রথমে প্রতিষ্ঠান নিয়ে বেশ আশাবাদী কথা বললেও প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়েই নিজেকে শুধু জমির মালিক বলে দাবী করেন। তবে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ সবচেয়ে বেশি ভালো জানেন।
এ ব্যাপারে জানতে এমডি হারুনুর রশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

আবেদনে দেখানো দুইজন ডাক্তার ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানে সেবা দিচ্ছেন উল্লেখ করা হলেও ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে কর্মরত ডাঃ ফেরদৌস তাওহীদ বলেন, আমি এ হাসপাতালের নাম শুনি নি কখনও। সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে এমন কোন হাসপাতালের নিয়োগের ব্যপারে কখনও আলোচনা হয়নি।

তবে চেয়ারম্যান কেফায়েত উল্ল্যাহ মামুন বলেন, শর্ত স্বাপেক্ষে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হলে কাজ শুরু করবেন তারা।

আবেদনে উল্লেখিত দুইজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের একজন মাহমুদুল হাসান বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কি তাও জানা নেই। সিটি হাসপাতালে কর্মরত আছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আজ পর্যন্ত আমি ফেনীতেই যাইনি।

ফেনী সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (প্রা: লি:) নামে আবেদনপত্র প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ মিয়া জানান, অসম্পূর্ণ আবেদন পেন্ডিং অপশনে থাকে। সকল তথ্য হাতে পেলে তখন সংশ্লিষ্ট জেলায় তদন্তের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আবেদন ফি ও রশিদসহ একাধিক তথ্য না থাকায় আবেদনটি তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়নি।

ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তদন্তের জন্য ঢাকা হতে ফেনী সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (প্রা: লি:) নামে কোনো চিঠি আসেনি।