নব্বইয়ের দশকে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় নিজের বসতভিটা বিক্রি করে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন পৌরসভার সহদেবপুর এলাকার জসিম উদ্দিন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন তিনি। তখন হতে তিন কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতে হয় তাকে৷ জসিমের স্বপ্ন ছিল, নিজস্ব এক টুকরো ভূমির। গতকাল রবিবার (১৭ জানুয়ারি) সেই স্বপ্ন সত্যি হলো জসিমের। তার মত আরও ১৫ পরিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ঘর।

গতকাল রবিবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে ফেনীর সদরের ধর্মপুরের তালতলা গ্রামে মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদান প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরগুলোর চাবি উপকারভোগীদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী।

এসময় বক্তব্য প্রদানকালে সাংসদ বলেন, অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মানবিকতা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নিজাম হাজারী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে।

উপকারভোগীদের উদ্দেশ্যে সাংসদ বলেন, আপনারা যারা ধর্মপুর এলাকায় ঘর পেয়েছেন তারা এই এলাকার মানুষজনের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে চলবেন। কোন প্রকার অন্যায় ও অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হবেন না। ধর্মপুর এলাকার মানুষজন আজকে থেকে আপনাদের আপন করে নেবে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জোৎস্না আরা জুসি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আফতাবুল ইসলাম।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যারা ঘর পাচ্ছেন তারা আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর মেহমান। তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা দেখাতে হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উপহার, আশ্রয়ণের অধিকার’ বাস্তবায়নে এলাকার তালতলা গ্রামে সরকারী খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করে ফেনী সদর উপজেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে ফেনী সদর উপজেলার ১২ ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ঘর পেয়ে দীর্ঘদিনের দুর্দশা ঘুচল গাইবান্ধার কাশেম আলীর। দীর্ঘ ৩০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে ফেনীতে এসে স্থায়ী হন তিনি। কিন্তু মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিল না তার। ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। কাশেম আলী বলেন, ফেনীতে পরিবারসহ আমাকে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দুটি ঘরে শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার রয়েছে। সামনে রয়েছে বারান্দা। প্রতি ৫টি পরিবারের ব্যবহারের জন্য রয়েছে একটি নলকূপ। ঘরগুলোর মাঝে রয়েছে একটি বড় মাঠ। মাঠে রয়েছে সোলার বিদ্যুতের ব্যবস্থা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ফেনীতে প্রথম ধাপে ৭০জন অসহায় ও ভূমিহীন ঘর পাচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৪৫টি পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে।