চলতি বছর মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে দুই দফায় বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফুলগাজী উপজেলার বাসিন্দারা। চলতি বছরের জুলাই ও অক্টোবরে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন ধরে প্লাবিত হয় ফুলগাজী, পরশুরাম উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম। এতে নষ্ট হয় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এসব জনপদের এসব অবকাঠামোর সংস্কার শুরু হয়নি এখনো। ফলে জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফুলগাজীর বক্সমাহমুদ সড়কের ঘনিয়ামোড়া অংশ, একরাম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক, ফুলগাজী বাজার বক্সমাহমুদ কানেকটিং সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অন্যদিকে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের সিরাজদ্দৌলা হতে ধনিকুন্ড বাজার সড়কের দুর্গাপুর স্থান, দুর্গাপুর হতে জয়পুর সড়কের রতনপুর অংশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ মাস অতিবাহিত হলেও সড়কগুলো এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয় নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে এলজিইডির ১৩টি সড়কের ১২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে ৬টি, পরশুরামে ৭টি সড়ক রয়েছে।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) জনবল সংকটের কারণে ফুলগাজী গ্রামীণ সড়কগুলো দেখার কেউ নেই। এতে করে পুরো এলাকার সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এ এলাকার মানুষরা দুর্ভাগা। দুই একজন উপ প্রকৌশলী রয়েছেন, তারা ঠিকমতো চোখে দেখেনা। তাদেরকে বারবার বলা হলেও তারা এসে দৃশ্যমানতা যাচাই না করায় এখনো পর্যন্ত সড়কগুলো বেওয়ারিশ অবস্থায় রয়েছে।

ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া এলাকার রিক্সাচালক আব্দুল জলিল জানান, আমরা নিজেরা নিজেদের পকেট থেকে ২০/৩০ টাকা দিয়ে রাস্তার মধ্যে মাটি ফেলছি। এরপর গাড়ি-ঘোড়া চলতেছে। আমরা নিজেরাও চলতেছি। অনেকদিন এভাবে পড়ে আছে এগুলো দেখার কেউ নেই।

উত্তর দৌলতপুরের গ্রামের ইব্রাহিম নামে এক বাসিন্দা জানান, রাস্তা ভাঙ্গার কারণে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে কষ্ট হয়। বিশেষ করে রাত্রে বেলায় গাড়ি পাওয়া যায় না। গাড়ির জন্য ফোন করলেও আসে না।

দক্ষিণ দৌলতপুরের বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, ৫ মাস আগে রাস্তাগুলো বন্যায় ভেঙে গেছে। অথচ এখন মেরামতের জন্য কেউ আসেনি। আমরা খুব কষ্ট করছি। বিশেষ করে রাতের বেলা চলাচল করতে খুব কষ্ট হয় আমাদের।

স্কুল শিক্ষার্থী ফাতেমা ও মিশুক জানান, ভাঙ্গা রাস্তার কারণে আমাদের স্কুলের গাড়ি আসতে যেতে অনেক সময় লাগে। অনেক সময় স্কুলে যেতে দেরি হয়। রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করলে আমাদের দুর্ভোগ কমত।

চিথলিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো এখনও সংস্কার করা হয়নি। বন্যার পরে আমরা নিজেরাই স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে ও চারগ্রাম সমবায় সমিতির সহযোগিতায় ভাঙ্গা সড়কের পাশে মাটি ফেলে বিকল্প সড়ক তৈরি করে চলাচলের উপযোগি করি। ৬ মাসেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলজিইডির সড়কগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সড়কের কারণে এসব অঞ্চলে বড় কোন গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না।

এ ব্যাপারে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হাসান আলী জানান, ইতোমধ্যে সড়কগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, বন্যায় পরশুরাম ও ফুলগাজীতে সড়কের প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই ভাঙা সড়ক সংস্কার করা হবে বলে আশ^াস দেন তিনি।

বন্যা থেকে রক্ষার জন্য ১৯৫ কি: মি: বাধঁ নির্মান হলেও রক্ষা পায়নি গ্রামবাসীরা। চলতি বছরে অন্তত দু দফা বাঁধের ১৯টি স্থান ভেঙ্গে বন্যার কবলে পড়ে দুটি উপজেলার অন্তত ৩০ টি গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয় কয়েক লাখ মানুষ। আর পানির তীব্র স্রোতে নষ্ট হয় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ গ্রামীণ জনপদ।