করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার সীমিত পরিসরে বিজয় দিবস উদযাপন করা হলেও ফেনীতে আনন্দের কমতি ছিল না। দলমত নির্বিশেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে ফেনীতে পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জ্বীবীত হয়ে দেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয়ে বিজয় দিবসের আনন্দ ভাগাভাগি করে প্রশাসন হতে শুরু করে ফেনীর আপামর জনতা।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় শহরের জেল রোডে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়। সকাল থেকেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে জেল রোডের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে। সকাল ১১টায় বিজয় র‌্যালী সহযোগে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানায় জেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এডভোকেট হাফেজ আহম্মদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেনী ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন নাছিম ও ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ দলের শীর্ষ হতে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান।

এর আগে সকাল পৌনে ৮টায় শ্রদ্ধা জানাতে আসেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী, সিভিল সার্জন ডাঃ মীর মোবারক হোসাইনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানায় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানর আবদুর রহমান বিকম, নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সাংবাদিক সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ একাত্তরের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গনে। ফুলে আর ফুলে ভরে যায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। এছাড়া আরও শ্রদ্ধা জানান লেডিস ক্লাবের সভাপতি সেলিনা আক্তার ববি, ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল, জয়নাল হাজারী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হালিম। ফেনী বিএমএ, স্বাচিপ, ফেনী জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানায় মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে একই স্থানে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বিজয়ের শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী, সিভিল সার্জন ডাঃ মীর মোবারক হোসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা সুমনী আক্তার, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এ দিনটিকে যারা আমাদের উপহার দিয়েছেন তাদের সম্মান জানাই। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশকে একটি কাক্সিক্ষত জায়গা নিতে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজয় দিবসের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে ও দেশের উন্নয়নে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী।

অতিথির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা: মীর মোবারক হোসাইন বলেন, দেশের জন্য জীবন দিয়ে যারা বিজয় এনেছেন, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়ে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান বিকম বলেন, যারা একসময় আমাদের ঘৃণা করত তারাও আজ সরকারের উন্নয়নের জন্য আমাদের পছন্দ করছে।

অতিথির বক্তব্যে দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেষ্ট থাকার আহবান জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা: সুমনী আক্তার।
সভা সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএনএম আব্দুল্লাহ্ আল মামুন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে হাসপাতাল, কারাগার ও শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধদের সুস্বাস্থ্য ও জাতির অগ্রযাত্রা কামনা করে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজয় দিবস উদযাপনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সরকারি-বেসরকারি ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

ফেনীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচীতে দিনটি উদযাপন করে।