ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ্ কায়সার সড়কের চিশতীয়া মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় ফের নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধা সাড়ে ৫টার দিকে নবজাতকের বাবা সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের আক্রামপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। এর আগে গত ৮ মার্চ অবহেলায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালটি সিলগালা করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামান।

অভিযোগকারী কামাল উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের কর্মরতদের অবহেলা ও অনীহার কারণে আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গেলে দেখে যায়, তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও আয়া কেউ হাসপাতালে নেই। ঘটনাটি আঁচ করতে পেরে তারা সটকে পড়েছেন বলে জানান কামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ভর্তি আমার স্ত্রী মোর্শেদা আক্তারকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন থেকেই তার সিজার অপারেশনের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। ওইদিন দুপুর ১ টায় হাসপাতালের সহকারি মো: রাশেদুল ইসলাম সিজার অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে ৫ মিনিট পরেই এনেসস্থেশিয়া দেন। পরে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অতিক্রম করলেও অপারেশনের জন্য কোন ডাক্তার প্রবেশ না করায় আমার স্ত্রী চিৎকার করে আমাকে ডাকে। তখন নার্স ঝর্নাসহ কয়েকজন তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেন। দুপুর আড়াইটায় ডাঃ তাহমিনা আক্তার নিলু সিজার অপারেশন করলে আমার ছেলে ভূমিষ্ঠ হয়।

কামাল উদ্দিন আরও বলেন, শুক্রবার থেকে ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে বিষয়টি আমাকে জানালে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই। একজন বিশেষজ্ঞ শিশু ডাক্তার দেখানোর জন্য তাদের বারবার অনুরোধ করলেও সাড়া দেননি। বরং তারা আমাকে জানানোর কারণে হাসপাতালে অবস্থানরত আমার স্বজনদের হুমকি প্রদান করা হয়।

নবজাতকের বাবা আরও বলেন, শনিবার ছেলের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে আমি সন্ধ্যায় জোরপূর্বক চিশতীয়া থেকে ছেলেকে জেড ইউ মডেল হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করাই। পরে আমি রাত ২ টায় চিশতীয়ায় চিকিৎসাধীন আমার স্ত্রীর কাছে থাকাকালীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার ছেলের মৃত্যুর খবর দেন। তখন চিশতীয়ার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বাদল এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে না জানিয়ে জেড ইউ হাসপাতাল থেকে টাকা পরিশোধ করে ছেলের মরদেহ চিশতীয়াতে আনেন।

নবজাতকের চাচা জামাল উদ্দিন বলেন, অদক্ষ টেকনিশিয়ান মোঃ রাশেদুল ইসলাম আমার ভাতিজার পায়ে ক্যানোলা লাগিয়েছিল। মৃত্যুর পরে তার পা থেকে আমি এটা খুলেছি।

এ বিষয়ে জানতে অপারেশন থিয়েটার সহকারি ও হাসপাতাল পরিচালনাকারী মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকেই নবজাতকের ক্যানোলা লাগাই। প্রশিক্ষণ ছাড়াই এমন কাজ কেন করেছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মাদ্রসা থেকে ৮ম শ্রেণি পাশ করা রাশেদ বলেন, কাজ করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে গেছি। মোঃ রাশেদুল ইসলাম পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের উত্তর তালবাড়িয়া গ্রামের মৃত এরশাদ উদ দৌলার সন্তান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক মনির আহম্মদ বাচ্ছু নিজের পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদে আমার নাম থাকলেও রাশেদ এবং প্রণবকে হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হবে জানান কামাল উদ্দিন।