মার্চ-২০২০ এ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান সিটিতে আরম্ভ হওয়া অজ্ঞাত রোগ পরবর্তীতে কোভিড-১৯ হিসাবে সনাক্তকৃত- বৈশ্বিক মহামারী হিসাবে ঘোষিত রোগটির প্রাথমিক ধাক্কায় সম্পুর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় প্রথমদিকে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছিল। ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি সম্বন্ধে সম্যক অবহিত হয়ে এরোগ সনাক্তে পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকটাই ধাতস্থ হয়ে উঠেন। এর বহুমাত্রিক কুফলকে মোকাবিলা করতে গিয়ে রাজনীতিবিদ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী-সুশীল সমাজ সহ সমাজের প্রায় সকল স্তরের লোকজনকেই সম্পৃক্ত হতে হয়।

এ রোগের ক্রম উর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে আমাদের অনেক চরম মুল্যও কিন্তু দিতে হয়েছে ইতোমধ্যে যা বৈশ্বিক মহামারীর একটি প্রতিক্রিয়া বটে। কিন্ত আমরা আশান্বিত হচ্ছিলাম এই পর্যবেক্ষণে যে মধ্য জুলাইতে এর প্রকোপ ক্রমান্বয়ে কমে আসছিলো। কিন্ত ইদানীং আবার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের অনুষঙ্গ হিসাবে আমাদের দেশে এ রোগের প্রকোপের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে যে এ রোগ প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিষেধক যথাক্রমে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব, হাত ধোয়া এসকল কার্যক্রমে জনগণের কাংখিত সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।

কিন্ত আশার কথা হলো ইতোমধ্যেই সরকার রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সহ চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনায় ও অনেকটাই শৃংখলা স্থাপনে সমর্থ হয়েছেন। জেলা পর্যায়ে ফেনী জেলায় প্রথম থেকেই চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনায় বিএমএ ফেনী জেলা শাখার উপস্থাপিত ধারণা কে অত্যন্ত সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসেন ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টি বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান শ্রদ্ধা ভাজন অগ্রজ জনাব আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ভাই, সক্রিয় এবং অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন ফেনীর গণমানুষের নেতা জনাব নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি, পর্যায়ক্রমে জনাব লেঃ জেঃ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, জনাবা শিরিন আক্তার এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানবৃন্দ যথাক্রমে দিদারুল কবির রতন, জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপ্টন-সোহেল চৌধুরী, কামাল উদ্দিন মজুমদার, আবদুল আলীম, পরশুরামের মেয়র সাজেল। তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ও বদান্যতায় প্রয়াত সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সমন্বয়ে জেলা সদর হাস্পাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী, আরএমও যথাক্রমে ডাঃ ইকবাল ও ডাঃ রিপন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ রুবাইয়াত, ডাঃ উৎপল, ডাঃ মাসুদ রানা, ডাঃ শিহাব, ডাঃ মোজাম্মেল ও ডাঃ আব্দুল খালেক মামুনের তত্বাবধানে জেলা সদর হাসপাতাল ও প্রত্যেকটি উপজেলা হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা প্রদানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে যা বাংলাদেশে জেলা হিসাবে ফেনীই প্রথম।

ইতোমধ্যে ফেনী বিএমএর উদ্যোগে চিকিৎসক ও সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের অক্সিজেন সেবা প্রদানে প্রশিক্ষণ ও দেয়া হয়েছে যা সমন্বয় করেছেন বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ বিমল ও বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রিয়াজ। এসকল কর্মকান্ডে বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য জনাব ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবির, জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান ও জেলা পুলিশ সুপার জনাব নুরুন্নবী চৌধুরীরও প্রত্যক্ষ অবদান ছিল। অবদান ছিল ডায়াবেটিস হাসপাতালের কার্যকরী কমিটির পক্ষে বাবু শুসেন চন্দ্র শীলের। এত সব কার্যক্রমে নেপথ্য থেকে সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেছেন প্রিয়ভাজন জনাব জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পাপ্পু।

এখন মুল প্রসঙ্গ- দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা। যেহেতু আমাদের জেলায় সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা অন্য অনেক জায়গা থেকে উন্নততর - রোগনির্ণয়ে স্যাম্পল জটিলতা ও অনেকটা নিরসন হয়েছে তাই নব উদ্যমে চিকিৎসক -স্বাস্থ্যকর্মীরা সদ্য যোগদানকৃত সিভিল সার্জন ডাঃ মীর মোবারক হোসেন মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কার্যক্রমে যথারিতি আরো গতিশীল ভুমিকা রাখার প্রাক প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন এবং এতে জনপ্রতিনিধি, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, গণমাধ্যম -সুশীল সমাজ সহ সর্বস্তরের লোকজনের সহযোগীতা প্রয়োজন হবে। তবে আবারও বলছি যতদিন পর্যন্ত না ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা না হবে ততদিন পর্যন্ত মহান আল্লাহতালার রহমত ও মানুষের সচেতনতাই এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ লাভের একমাত্র উপায়।

তাই মাস্ক ব্যাবহার, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এই অভ্যাসগুলো পালন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রাণাধিকার কে মানবাধিকারের উপরে স্থান দেয়ার প্রয়োজনে প্রশাসনকে কঠোরতর হতে হবে।