ফেনীতে বাল্য বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় মা-বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে বিবি জুলেখা রেজবি নামে ফেনী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের এক শিক্ষার্থী। আজ রবিবার (১ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে থানায় উপস্থিত হয়ে এ সাধারণ ডায়েরী করে মেয়েটি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে রেজবির বাবা শেখ আহাম্মেদ ও মা সেলিনা আক্তার তাদের মেয়েকে বিয়ে দেবার চেষ্টা করছে।

অভিযোগে মেয়েটি উল্লেখ করে, আজ পর্যন্ত আমার বয়স ১৬ বছর ১১ মাস ২২ দিন চলছে। ইতোপূর্বে তারা আমাকে আরেকবার বাল্যবিয়ে দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছিল।

রেজবির সাথে কথা বলে জানা যায়, গতবছর বাবা-মা তার অনিচ্ছায় চৌদ্দগ্রামে কাজী সোহেল নামে একজনের কাছে বিয়ে দেয়। স্বামী যৌতুকের জন্য নানাভাবে নির্যাতন করে। তখন মামলা করলে বিগত ৬ মাস আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

রেজবি বলেন, আমি পড়ালেখা শেষ করা ছাড়া আর বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু আমার মা বাবা আমাকে জোর করে বিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। তাই এখন বাধ্য হয়ে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজবির বাবা শেখ আহাম্মেদ তার মেয়ের ১৮ বছর হতে আর ৪ মাস বাকী রয়েছে বলে দৈনিক ফেনীর প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন। কিন্তু তার জন্ম সনদ অনুযায়ী দেখা যায়, আজ পর্যন্ত তার বয়স ১৬ বছর ১১ মাস ২২ দিন চলছে।

এর আগে তাকে বাল্য বিয়ে দেবার ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন উত্তর দেন নি শেখ আহম্মেদ। মেয়েকে পড়ালেখা করাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েকে পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য নেই।

রেজবির মা সেলিনা আক্তার বলেন, মেয়ের কারণেই তাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হই আমরা। এর আগে বিবাহ বিচ্ছেদও তার কারণেই হয়েছিল। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেলিনা আক্তার মেয়ের সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেবেন না বলে আশ্বাস দেন।

এ খবর জানতে পেরে মেয়েটির সহায়তায় মধ্যম চাড়িপুরে যায় স্বর্ণকিশোরী ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) ফেনী জেলার সদস্যরা। এরপর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সদস্যরা মেয়েটির বাড়িতে যায়।

ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেনের নির্দেশে আমরা মেয়েটির বাড়িতে যাই। পরে তার বাবা-মা মেয়েকে পড়ালেখা করাবেন বলে আশ্বাস দেন এবং ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগে বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা প্রদান করেন।

স্বর্ণ কিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন ফেনীর দলনেতা মাহবুবা তাবাসসুম ইমা বলেন, রেজবি আমাদের স্বর্ণকিশোরী ক্লাবের সদস্য। বিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করছিল তার পরিবার। পুলিশের সহযোগিতায় আমরা তার বাবা-মা কে বুঝিয়ে বলি এবং তারা ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবেন না বলে কথা দিয়েছেন।

এসময় ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্ক ফোর্সের (এনসিটিএফ) ফেনী জেলার সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ফেনী জেলা স্বর্ণ কিশোর কামাল উদ্দিন ও স্বর্ণ কিশোরীর সদস্য জান্নাতুল মাওয়া ও সাবিহা মাইশাসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।