পরশুরামের ঋণের কিস্তির টাকা না দেয়ায় ঋণগ্রহীতা ও জামিনদারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজ নামক একটি এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই এনজিওর উপজেলা শাখা ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম ও কর্মকর্তা আবু রাহাতসহ ৪ জনকে আসামী করে পরশুরাম থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরশুরাম মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল আলম।

এর আগে ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার কিন্ডারগার্টেন সংলগ্ন সফিকুর রহমানের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান আহত খোদেজা আক্তার।

ঋণগ্রহীতা খোদেজা আক্তার বলেন, গত বছরের নভেম্বরে ওই এনজিও হতে মাসিক কিস্তিতে আমি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও আমার ভাই মাসুদা মঈনুদ্দিন ২ লাখ ঋণ গ্রহণ করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মাসিক কিস্তির টাকা দুইজনেই পরিশোধ করে আসছিলাম। কিন্তু করোনাকালীন আমরা মার্চ মাস হতে কিস্তির টাকা প্রদান করতে পারিনি। বিজ কর্মকর্তারা আমাদের বারবার কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। গতকালও টাকার জন্য আমার বাড়িতে আসলে আমি আমার স্বামী সফিকুর রহমান, মা রোকেয়া আক্তার, বাবা শাহাবুদ্দিন ও ভাই রিয়াজ উদ্দিনকে আমাদের বাড়ি আসতে বলি। এরপর বিজ কর্মকর্তা আবু রাহাত শাখা ব্যবস্থাপককে খবর দিলে তারাও আসে। ঋণ পরিশোধ নিয়ে কর্থাবার্তার একপর্যায়ে তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিজ কর্মকর্তারা আমাদের উপর হামলা চালায়।

খোদেজার মা রোকেয়া আক্তার বলেন, তারা আমার মাথায় গাছের ডাল দিয়ে আঘাত করে। আমার স্বামী, ছেলে ও মেয়ে জামাইয়ের উপরও হামলা চালায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজের শাখা ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা কোন প্রকার হামলা করিনি। তারা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালালে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে আসি। খোদেজা আক্তার ঋণগ্রহীতা ছাড়াও তার ভাই মঈনুদ্দিনের ঋণের জামিনদার। গত বছরের নভেম্বর মাসে তাদের মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ঋণ দেয়া হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে আসলেও মার্চ হতে এ পর্যন্ত কোন কিস্তি প্রদান করেনি।

এসময় করোনাকালীন সময়ে সবধরনের ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করার সরকারি নির্দেশনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের কোন চিঠি পাইনি।

বিজ কর্মকর্তার সরকারি নির্দেশনার চিঠি না পাবার দাবি প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আকতার দৈনিক ফেনীকে বলেন, তাদের এ বক্তব্য অসত্য ও ভিত্তিহীন। ইউএনও বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব সময়ের শুরু হতে সকল সরকারি নির্দেশনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। চিঠি দিয়ে সকল সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে।

ইয়াছমিন আকতার বলেন, কিস্তি প্রদান না করায় হামলার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টো বলেন, ঘটনা শুনে আমি হাসপাতালে গিয়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। পরবর্তীতে থানায় যোগাযোগ করে তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আফতাব উল আলম বলেন, রাতে তারা চিকিৎসা নিতে আমার কাছে এসেছিল। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মাথায় আঘাত প্রাপ্ত রিয়াজ উদ্দিনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেয়া হয়। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

পরশুরাম মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল আলম বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে খোদেজা বেগম বাদী হয়ে আশরাফুল আলম, আবু রাহাতসহ নামোল্লেখে ও অজ্ঞাতনামা ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে।