'ধানও হাইতান্ন, খেরও হাইতান্ন' (ধানও পাব না, খড়ও পাব না)। ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরশুরামের জয়ন্তীনগর গ্রামের কৃষক আলম হতাশা নিয়ে নিজের অনুভূতি এভাবেই ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেন, ঋণ নিয়ে জমিতে ধান লাগাইছি, ধান বিক্রি করে টাকা দিব ভেবে।

ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আলমের মত ফেনীতে এক হাজারের অধিক কৃষকের আমন ধানের ক্ষতির আশংকা রয়েছে । ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া তিনদিনের ভারি বর্ষণে জেলার একশ হেক্টরের অধিক জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন তথ্য দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার জেলার ৬ উপজেলায় ৬৬ হাজার ৫ শ ২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে প্রাথমিক হিসেব মতে ১২১ হেক্টর জমি গতকয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

আব্দুল বাতেন বলেন, ফসলের কি পরিমান ক্ষতি হচ্ছে তা জমির পানি শুকিয়ে গেলে চুড়ান্তভাবে নির্ণয় করা যাবে। বর্তমানে আমরা প্রাথমিকভাবে একটি খসড়া হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে আমনের পাশাপাশি ১হাজার ৮শ ৪৫ হেক্টর আগাম শীতকালীন সবজি আবাদের ১০২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবাদকৃত ৬১ হেক্টর ক্ষিরার মধ্যে ১৫ হেক্টর, ৮ হেক্টর ধনিয়ার মধ্যে ২ হেক্টর এবং আবাদকৃত ৭ হেক্টর মাসকলাইয়ের মধ্যে ১ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরশুরাম উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের মো. এমাম নামে এক চাষী বলেন, এককানি (৪০ শতক) জমিতে আমন চাষ করেছি। সার, বীজ, শ্রমিক খরচসহ সব মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমি পানিতে ডুবে থাকায় ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সোনাগাজীতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমজাদ হোসেন ও মোবাশ্বের জানান, বাতাস এবং অতিবৃষ্টির কারণে জমির বেশিরভাগ ধানগাছ ন্যুয়ে পড়েছে। ফলন ভালো হওয়া শর্তেও জমিতে পানি থাকায় ধান পচে যাচ্ছে।

জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছাগলনাইয়া উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম দৈনিক ফেনীকে বলেন, উপজেলায় ৯ হাজার ২ শ ৫০ হেক্টর চাষকৃত আমন ধানের মধ্যে ৪০-৫০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৯ শ ৭০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষমাত্রার তুলনায় ফলনও আশানুরূপ ভালো ছিল।কিন্তু গত কয়দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে ১৯ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। এতে ১১০ জনের অধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, পরশুরামে ৩ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। বন্যায় ৩ হেক্টর আমনের খেত নষ্ট হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনো পানি জমে আছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতির চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজ এখনও চলছে।
তবে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি বিভাগের হিসাবের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আবদকৃত ১৫ হাজার ৯শ ৪০ হেক্টর আমনের মধ্যে ২০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এটি কর্তনের পর ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ জানা যাবে। উপজেলায় আমনের পাশাপাশি ১০ হেক্টর সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৩শ ১০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৫ হেক্টর জমির ধান দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। শীতকালীন আবাদকৃত ১৯৫ হেক্টর জমির মধ্যে ২ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে ক্ষতির মোট পরিমাণ জানা যাবে বলেন তিনি।

ক্ষতির পরিমাণ এবং কৃষকদের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুমিনুল ইসলাম দৈনিক ফেনীকে বলেন, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ২শ ৫ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে ৩০ হেক্টর জমির ধান দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ৪০ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত শীতকালিন শাকসবজির মধ্যে ২৫ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী মানিক বলেন, কৃষকরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন এ জন্য জেলা কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার্থে আগাম জাতের চারা রোপণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।