প্রতিদিনকার মত রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের এনায়েত ভূঞা গ্রামের গ্রামের ছালামত উল্যা চেয়ারম্যান বাড়ীর দুই পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তারা জানতেন না রাতের খাবারে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে গেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সেই খাবার খেয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলেছিলেন দুই পরিবারের নারী-শিশুসহ ১২জন সদস্য। আর সুযোগ বুঝে রাতের বেলা ঘরে ঢুকে ওই দুই পরিবারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ওই বাড়ির স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল ও প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের ঘরে এ ঘটনা ঘটেছে। সকালে বাড়ির লোকজন অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আজ সোমবার ( ২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে।

অচেতন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন আবদুল হকের মেয়ে লিপি (৩৫), জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জান্নাত (২৭), ফখরুল ইসলামের ছেলে তানজিদুল ইসলাম (৫), তাজুল ইসলামের ছেলে আজমাইন (১০), খালেদা (৩৫), লামিশা (৮), জেসমিন আক্তার (৩৫), শেখ ফরিদ (৪৫), জাবেদ আলম (২৩), ফাহমিদা আক্তার (২৮), মোঃ সোহেলের স্ত্রী রাহেনা আক্তার (২৮)।

ঘটনার পর হতেই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে পুলিশ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাঈনুল ইসলাম।

তিনি জানান, খবর পেয়েই পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে জেলার অন্যান্য থানায় পূর্বে দায়েরকৃত এ ধরনের মামলার আসামীদের ব্যপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে বলে জানান জেলা পুলিশ বিভাগের এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ঘটনার শিকার যুবলীগ নেতা মোঃ সোহেল জানান, সন্ধ্যার দিকে সবার অগোচরে রান্নাঘরে ঢুকে রাতের খাবারে ওষুধ মিশিয়ে গিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। সকালে দীর্ঘসময় ধরে সবাই ঘুমিয়ে থাকায় বাড়ির লোকজন ডাকাডাকি করতে গিয়ে তাদের অচেতন অবস্থায় মেঝে ও খাটের উপর দেখতে পায়। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে আসা হয়।

তিনি জানান, তার ঘর থেকে নগদ এক লাখ বিশ হাজার টাকা, পাঁচটি স্বর্ণের আংটি, চারটি গলার চেইন, দুই জোড়া কানের দুল এবং জাহাঙ্গীরের ঘর থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা, ১টি গলার চেইন, ২ জোড়া কানের দুল ও ১টি নাকফুল নিয়ে গেছে তারা।

হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল ফোরকান বুলবুল জানান, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় আক্রান্তরা সকলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কবির আহম্মদ বলেন, আজ সকালে ১১জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছিল। বাকী একজনকে অন্যত্র চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। তারা সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। খাদ্যদ্রব্যে চেতনানাশক কোন ওষুধ মেশানোয় তারা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম শিকদার জানান, ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে রাতের খাবারের চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে এ কাজটি করেছিল তারা।