রাজধানী ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফেনীর ছেলে কামরুল বাহারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে ফার্মগেট এলাকার ইন্দ্রপুরী নামে আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ হতে দরজা ভেঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।

কামরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ও অমর একুশে হলের আবাসিক ছাত্র। কামরুল ফেনীর পরশুরামে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের হাবিব উল্লাহ বাহারের ছেলে। গত সপ্তাহে তিনি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে লক্ষীপুর জেলার রামগতিতে যোগদান করেছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হোটেলের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই হোটেলে ওঠেন কামরুল। রবিবার দুপুর পর্যন্ত না উঠায় হোটেলের লোকজন ডাকাডাকি করে, কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশটি দেখতে পায়। সেটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

কামরুলের বন্ধু ও পরিবারের স্বজনদের ধারণা তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে তার আত্মহত্যার সঠিক কারণ কেউ বলতে পারেন নি। ওই হোটেলের কক্ষ হতে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে কামরুল তার বড় ভাই ও পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।

কামরুলের খালাত ভাই আনিসুল হক সোহেল জানান, গত বৃহস্পতিবার ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় যান কামরুল। শুক্রবার ডাক্তার দেখিয়ে তিনি ওই রাত তার এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করেন। এর পরদিন শনিবার দুপুরে বড় ভাই হুমায়ুন বাহারের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় তার। এসময় তিনি লক্ষীপুরে মেস ঠিক করতে যাবেন বলে বড় ভাইকে জানান। এরপর থেকে পরিবারের কারো সাথে তার আর কোন যোগাযোগ হয়নি। তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সোহেল জানান, তবে মৃত্যুর আগে সর্বশেষ বন্ধুদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এক বন্ধুকে ‘তার পরিবারকে দেখে রাখার’ অনুরোধ জানিয়ে ম্যাসেজ পাঠান কামরুল। পরদিন বিষয়টি তার বড় ভাইকে অবহিত করেন বন্ধুটি। তিনি তখন পরশুরাম থানায় যোগাযোগ করেন। এরপর দুপুরে দিকে ঢাকা হতে পুলিশ ফোন করে কামরুলের মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায়।

কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন, তা পরিবারের সদস্যরা জানাতে পারেননি। তারা বলেন, কামরুল সব সময় খুব হাসিখুশি ছিলেন। তার ভেতরে কোন প্রকার মানসিক অবসাদ বা দুঃশ্চিন্তা লক্ষ্য করা যায় নি।

পরিবারের ৫ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৪র্থ। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)'র স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাবেক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী জানান, সোমবার (২১ সেপ্টম্বর) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে কামরুলের লাশ হস্তান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ। তার লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ফেনীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

আনিসুল হক সোহেল জানান, আজ বাদ এশা মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে নামাযে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তার পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। সে সম্প্রতি ব্যাংকে চাকরিও পেয়েছিল।’

তবে এটি কি আত্মহত্যা না হত্যা সেটি এখন নিশ্চিত নয় পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলছেন তারা। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।