ফেনী পৌরসভা কর্তৃক শহরের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা টমটম চালক ও মালিকদের হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা টমটম মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও যাত্রী কল্যাণ পরিষদ।

আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) সোমবার বিকালে শহরের ট্রাংক রোড সংলগ্ন মুক্ত বাজারের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে টমটল চলাচলের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি জানিয়েছেন মালিক ও চালকরা।

মানববন্ধনে ফেনী জেলা টমটম মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবুল মনসুর নয়ন বলেন, ব্যাটারি চালিত এই বাহনটি চালিয়ে জেলার প্রায় ৫ হাজার হতদরিদ্র মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। জেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের কাছে এটি একটি সহজলভ্য বাহন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ফেনী পৌরসভা শহরে টমটম চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষের পেটে ‘লাথি’ মারা হচ্ছে।

নিজেদের দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, অনেকে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে টমটম কিনে তা চালাচ্ছেন অথবা ভাড়া দিয়েছেন। এই বাহনের ভাড়া সহনীয় পর্যায়ের হওয়ায় সাধারণ মানুষজন শহরের মধ্যে যাতায়াতের জন্য এটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ফেনী পৌরসভা কয়দিন পর পর রাস্তা থেকে টমটম জব্দ করছে, চালক ও মালিকদের হয়রানি করছে। যা আমাদের ওপর জুলুমের শামিল। তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকেই ফেনীতে টমটম চলছে।

টমটম মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা এড. সমির চন্দ্র কর বলেন, ফেনী পৌরসভা টমটম বন্ধ করার কারণ হিসেবে বলছে, এটি চললে পরিবেশের ক্ষতি হয় বা অন্যান্য বাহনের চলাচলে অসুবিধা হয়। এ সমস্ত অযুহাত দেখিয়ে তারা প্রায়ই টমটম ভাংচুর ও জব্দ করে। সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ইতিপূর্বে সমস্যা সমাধান ও হয়রানি বন্ধে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।

এড সমীর চন্দ্র কর বলেন, তাঁরা আমাদের নির্দিষ্ট নিয়ম করে দিলেও কদিন বাদে আবারও ফেনী পৌরসভার লোকজন গাড়ী ভাঙচুর করে গাড়ী নিয়ে যায়। কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে গাড়ী আনতে পারলেও অধিকাংশই গাড়ী আনতে পারছেন না। সারা দেশেই টমটম গাড়ী চলাচল করছে তাহলে আমাদের শহরে কেন চলতে দেবে না। এই আইনজীবী আরও বলেন, এই সংকট নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকতার পরিচয় না দেন জেলার এবং জেলার বাইরের হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

ফেনী জেলা শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এড. খুরশিদ আলম বলেন, পৌরসভা শহরে টমটম চালাতে দিচ্ছেন না, চালালে গাড়ী ভাংচুর সহ জব্দ করছে। অথচ এই টমটম বাহনটি ও এর যন্ত্রাংশ দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হয় সেখানে সরকার বাধা দিচ্ছে না। গরীব ও নিন্ম আয়ের উল্লেখযোগ্য একটা শ্রেণি টমটম চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। টমটম চালক ও মালিকদের এভাবে হয়রানি করা বন্ধ না হলে খুব বড় ধরনের অন্যায় করা হবে তাদের উপর।

তিনি বলেন, প্রয়োজনে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ টমটম চালক ও মালিকদের সাথে বসে একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা করতে পারে। সেই নীতিমালা মেনে তারা গাড়ি চালাবে। এভাবে একটা শ্রেণিকে বেকার করার প্রক্রিয়া কোন ভাবেই কাম্য নয়।

কান্নাজড়িত কন্ঠে একজন টমটম চালক বলেন, টমটম চালিয়ে আমি আমার ছেলে সন্তান নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। গাড়ী চালাতে না পারলে আমি কই যাবো, ছেলেমেয়েদের কি করে খাওয়াবো। আমার আকুল আবেদন মেয়র মহোদয় আমাদের এই অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের গাড়ী চলাচলের ব্যবস্থা করে দিন।

শহীদুল ইসলাম নামের অপর এক চালক বলেন, পৌরসভার কয়েকজন সুপারভাইজারের নেতৃত্বে সুইপারদের নিয়ে আমাদের টমটম জব্দ করার অভিযানে নামে। সুইপাররা চতুর্দিক থেকে গাড়ীতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ী ভাংচুর করে। গাড়ীর চাবি ও গাড়ী জব্দ করে। টাকা দিলে তাৎক্ষণিক অনেকের গাড়ী ছেড়ে দেয়, টাকা দিতে না পারলে গাড়ী নিয়ে যায়।

আবদুল লতিফ নামে আরেক টমটম এক চালক বলেন, অধিকাংশ গরীব মানুষ কিস্তিতে বা এনজিও থেকে টাকা নিয়ে গাড়ী কিনেছে। তারা যদি গাড়ী চালাতে না পারে তবে কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে এনজিও কর্তৃকও হয়রানির শিকার হবে। অন্তত গরীব অসহায় মানুষদের কথা চিন্তা করে হলেও পৌরসভার মেয়র সদয় হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

এ ধরনের হয়রানি বন্ধে মেয়র, পৌর পরিষদসহ সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর ফেনী পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিন স্বাক্ষরিত একটা চিঠি কাউন্সিলরদের কাছে প্রেরণ করা হয়। সেখানে পৌরসভার ওয়ার্ড এলাকায় টমটম চলাচল করতে দেখলে অথবা টমটম ও ব্যাটারি চালিত রিক্সার কোন শো-রুম বা গ্যারেজ থাকলে তা জব্দ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

সেই নির্দেশনার পর হতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে লাঠি হাতে নিয়ে ‘টমটম’ দমনে নামে পৌরসভার কর্মীরা।