সকাল থেকে ভীষণ খুশি ছিল পথশিশু সুমন। নতুন জামা পরে সারাটা দিন কাটিয়েছে আনন্দে রঙিন প্রজাপতির পার্কের মত আনাচে কানাচে ঘুরে ঘুরে। কখনও দোলনায় দুলে, কখনো খেলনা গাড়িতে চড়ে, কখনও বা অন্যদের সাথে মিলে নেচে গেয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে। তার জীবনে দিনটি ছিল স্বপ্নের মত। পেটভর্তি ভালো খাবার আর সকলের ভালো ব্যবহার পেয়ে একদিনের জন্য জীবনের যাবতীয় দুঃখ ভুলে গেছিল সুমনের মত প্রত্যয় পাঠশালার আরও অর্ধশতাধিক পথশিশু।

পথশিশুদের ইচ্ছেপূরণে ও তাদের মানসিকতার বিকাশে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) তাদের নিয়ে মহিপালের গোল্ডেন শিশু পার্কে এ ‘আনন্দ সময়’র আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়। এ দিন শিশুপার্কটি ছিল তাদের জন্য উম্মুক্ত।

পথশিশুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পার্কে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

পরে বিকেলে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান ‘সহায়’র এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অসহায় শিশুদের কাছে সহায় রয়েছে। সেজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। ছিন্নমুল শিশুদের জন্য তারা কাজ করছে, সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে কাজ করছে সহায়। এসময় শিশুশ্রম ও ভিক্ষাবৃত্তি হতে ছিন্নমুল শিশুদের রক্ষা করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

সহায়ের উপদেষ্টা সাংবাদিক বখতেয়ার ইসলাম মুন্নার সঞ্চালনায় অনুভূতি ব্যক্ত করেন ফেনী সিভিল সার্জন ডাঃ মীর মোবারক হোসাইন দিগন্ত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ গোলাম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছাঃ সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতোয়ার রহমান, ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী, ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা জকর্মকর্তা ডাঃ মাসুদ রানা, ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন, ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ফেনী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ডিবিসি নিউজের ফেনী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঞা, সংগঠন সহায়’র সভাপতি মনজিলা মিমি ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কালের কন্ঠের জেলা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান দারা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার জেলা সংবাদদাতা আরিফুল আমীন রিজভী, সময় টিভির প্রতিবেদক আতিয়ার সজল, সহায়’র সহ-সভাপতি জুলহাস তালুকদার, ইয়াসির আরাফাত রুবেল, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ দুলাল তালুকদার।

এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে অবহেলিত এসব শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করছেন আয়োজকরা।

সংগঠনের সভাপতি মনজিলা মিমি জানান, এসব শিশু অভাবের মধ্যেই বেড়ে উঠেছে। এদের কারও বাবা নেই, মা দিনমজুরের কাজ করেন। আবার কারও বাবা রিকশা চালান। কারো মা-বাবা কেউই নেই। তাই সাধ থাকলেও সামর্থ্য নেই। এ কারণে অসহায় এসব শিশুর জন্য একবেলা ভালো খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। শিশুরা সেজেগুজে যোগ দিয়েছে অনুষ্ঠানে। আমরা মনে করি, এতে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটবে।

সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ দুলাল তালুকদার জানান, এই অনুষ্ঠান ছাড়াও করোনাকালে সংগঠনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার, মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের জন্য খাবার, শহরের বস্তি এলাকায় সহায়’র পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এমন অনুষ্ঠানের শিশুদের আনার উদেশ্য হলো যাতে  তারা নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রেরণা পায়।

গোল্ডেন শিশু পার্কের ব্যবস্থপনা পরিচালক শাহজাহান সাজু পথশিশুদের পার্কে ভ্রমণ ও বিভিন্ন রাইডে ভ্রমণের সুযোগ দিয়ে এ আয়োজনে সহায়তা করেন।