নিজের প্রতিষ্ঠিত নন্দন কানন ‘মুজিব উদ্যানে’ বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে এসে আশাহত হয়েছেন জয়নাল আবেদীন হাজারী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ফেনী-২ আসনের সাবেক এ সাংসদের দীর্ঘ এক দশক পরে ফেনী আগমনে যেমন উৎকণ্ঠিত হয়েছেন অনেকে, আবার অনেকে উৎফুল্লও। তবে সাধারণ মানুষ শংকিত হয়েছেন বেশিরভাগই। তার আগমনে ফেনী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল মাস্টারপাড়া জুড়ে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে তার ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে উপস্থিত হতে দেখা যায় নি। শনিবার (১৫ আগস্ট) বিকালে তার বাসভবন শৈল কুঠিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন মুক্তিযোদ্ধাদের আসতে দেয়া হয়নি।

সম্মেলনে জয়নাল হাজারী অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মাষ্টারপাড়ায় আসতে দেয়নি প্রতিপক্ষরা। তাদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ কারা? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট করে নাম বলেননি তিনি। তবে পুলিশের বরাত দিয়ে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে সীমিত সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রবেশে অনুমতি দেয়ার কথা ছিল।

ফেনীর এক সময়ের দোর্দন্ডপ্রতাপশালী এ নেতা সম্মেলনের পুরোটা সময় জুড়ে তার হতাশার কথা ব্যাক্ত করছিলেন সাংবাদিকদের। জানিয়েছেন, তার ফেনী আসা-যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতার কথা।

অন্যদিকে, কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই আজ নানা কর্মসূচিতে জেলা জুড়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতকর্মীরা। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি বিদেশ সফরে থাকলেও যথাযোগ্য মর্যাদায় ও গভীর শ্রদ্ধায় ফেনীতে শোক দিবস পালন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সকালে শহরের জেল রোডে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, সাবেক আমলা ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম। শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সমসাময়িক পরিস্থিতির কথা তুলে বলেন কেউ কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ফেনী এলে জেলা আওয়ামীলীগের মাধ্যমে আসবেন, এমনটাই রীতি। নেতা নির্দেশনা দিবেন, বিভাজন তৈরী করবেন না।

এদিকে ১৪ আগস্ট রাতে অপর এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জয়নাল হাজারী। কারা হামলা করেছে, কেন করেছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা মুখোশ পড়া ছিল বিধায় প্রত্যক্ষদর্শীরা চিনতে পারেনি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে এক দল মুখোশধারী সন্ত্রাসী আমার বসত বাড়ী ও মুজিব উদ্যানে গুলিবর্ষণ ও ভাংচুর করেছে। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। হামলার বিভিন্ন আলামত তারা সংগ্রহ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফেনীর বর্তমান ও অতীতের পরিস্থিতির কথা তুলনা করতে বলা হলে তিনি বলেন, ফেনী যদি শন্তির জনপদ হয় কেন একরামকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারা হল? নুসরাতকে কেন পুড়িয়ে মারা হল?

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। বলেছেন, গত ২০ বছরে সাংবাদিকদের এত সহযোগিতা আমি পাইনি।

শনিবার হামলার অভিযোগ এনে ফেনী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জনকে দায়ী করে অভিযোগ করেছেন তিনি।

শোকদিবসে কোন সভা করতে না পেরে অপ্রাপ্তি নিয়েই ফেনী ছাড়তে হচ্ছে তাকে। সহসা ফেনী ছেড়ে আবার ঢাকায় ফিরবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ফেনীর এ রাজনীতিবিদ।