লাল সবুজ মোড়ানো কফিনে করে নিজ গ্রামে ফিরলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, সাবেক আমলা ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিমের পিতা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

শেষবারের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। সকলের চোখে বিষাদের ছাপ, হৃদয়ে অ্যবক্ত বেদনা। বিউগলে বাজছে সুকরুণ সুর। চারদিকে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। সকলে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর শোকে বিদায় জানালেন পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে।

আজ সোমবার (২৭ জুলাই) পরশুরামের গুথুমা চৌধুরী বাড়ির পাশে তমিজ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

এর আাগে গুথুমায় খান বাহাদুর আব্দুল আজিজ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার ২য় নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা পূর্বে মরহুমের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সাংসদ নিজাম হাজারী বলেন, মরহুম সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পিতা হিসেবে একজন সফল পিতা। আমাদের ভাগ্যে সেটা আসবে কিনা জানিনা। উনি একজন সফল পিতা হিসেবেই বিদায় নিচ্ছেন। তিনি বলেন, তার ৩ জন ছেলেই স্ব স্ব জায়গা থেকে সু-প্রতিষ্ঠিত। এমন একজন মানুষের মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বলেন, মরহুমের নেক আমল গুলোর উচিলায় আল্লাহ্ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন সেজন্য সকলে দোয়া করবেন।

মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের বড় সন্তান ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম ও ভাগিনা সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সেবা ও সু-রক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।

অশ্রুঝরা চোখে নাছিম চৌধুরী বলেন, বাবা জীবন জুড়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরিতে কাজ করে গেছেন। সবসময় মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। পরস্পর ভাই হিসেবে সবাইকে কাছে টেনে নিতেন। তিনি বলেন, আমরাও যেন বাবার আদর্শ লালন করে সামনে এগোতে পারি সেজন্য সকলে দোয়া করবেন।

বিভিন্ন মহলের সমবেদনা জানানোয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সরকারের সাবেক এ আমলা বলেন, গতকাল থেকে আমার বাবার মৃত্যু সংবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দেশের মন্ত্রী এমপি, গণমাধ্যমসহ সর্বস্তরের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন, আজকের জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন সকলের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।

জানাজায় আরও অংশ নেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বি কম, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম মজুমদার, দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম লিপটন, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন, পরশুরাম পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার হুমায়ুন শাহরিয়ার, পৌর মেয়র বৃন্দ, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

জানাযায় ইমামতি করেন নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা সালাহ উদ্দিন পীর সাহেব নানুপুরি।

মরহুমের কফিনে জেলা প্রশাসক, সাংসদ নিজাম হাজারী, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ইউপি চেয়ারম্যানরাসহ, মরহুমের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জানাযা পূর্বে পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

বিশিষ্ট সমাজবেসক ও শিক্ষানুরাগী সালেহ উদ্দিন চৌধুরী রোববার (২৬ জুলাই) বিকালে ঢাকার বনানীস্থ নিজ বাসভবনে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রবিবার বাদ এশা গুলশান সোসাইটি মসজিদে তার প্রথম জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে।