করোনাভাইরাস ঠেকাতে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকাটি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ এবং সেটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে তুলতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে। 

সোমবার (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে ভ্যাকসিনটির প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রায় ১,০৭৭ মানুষের ওপর পরীক্ষার পর দেখা গেছে, এই টিকার ইনজেকশন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং হোয়াইট ব্লাড সেল বা শ্বেতকণিকা তৈরি করে, যা শরীরের ভেতর করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

যুক্তরাজ্য এর মধ্যেই ১০ কোটি টিকার জন্য চাহিদা জানিয়েছে।

গবেষণা দলের প্রধান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অ্যান্ড্রিউ পোলার্ড বলেন, আমরা আশা করছি এই ফলাফলের অর্থ হলো শরীরের ইমিউন ব্যবস্থা ভাইরাসটিকে চিহ্নিত করতে পারবে এবং আমাদের ভ্যাকসিন মানুষকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুরক্ষা দেবে।

বিশ্বের দুই শতাধিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবন প্রচেষ্টার মধ্যে যে ১৪টি মানুষের শরীরে ট্রায়াল করা হয়েছে তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডার্না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে অক্সফোর্ডই সবথেকে এগিয়ে রয়েছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক। তবে এখনই তা পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেবে কিনা তা বলার সময় হয়নি। কারণ বড় ধরনের পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনটি মহামারি ঠেকাতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরও অনেক কাজ বাকি আছে। কিন্তু প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল আশাব্যঞ্জক।

প্রাথমিক দুটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলে জানা যায়নি ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে বা তাদের উপসর্গ কমে আসবে। এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায়। এই পরীক্ষায় শুধু যুক্তরাজ্যেই দশ হাজারের বেশি মানুষের দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে। তবে পরীক্ষাটি আরও কয়েকটি দেশে বিস্তৃত করা হয়েছে। কারণ যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ কমে আসাতে ভাইরাসটি সত্যিই কার্যকর কিনা তা জানা কঠিন। এই ধাপে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ হাজার ও ব্রাজিলে ৫ হাজার মানুষের দেহে পরীক্ষা চালানো হবে।

এছাড়া ভ্যাকসিনটির চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। এই পরীক্ষায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে করোনায় সংক্রমিত হন। তবে চিকিৎসা না থাকায় এমন পরীক্ষা নিয়ে নৈতিক উদ্বেগ রয়েছে।