করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে চিন্তিত ফেনীর পশু ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে কেমন হবে এবারের কোরবানের পশুর বাজার, এ নিয়ে বিক্রেতাদের মাঝে বিরাজ করছে শংকা। এর সাথে গো-খাদ্যের দাম উর্ধ্বগতি খামারির দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। সঠিক দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

পরশুরাম চৌধুরী এগ্রো ফার্মের মালিক ও পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল জানান, গত ১৯ বছরের চিত্র আর চলতি বছরের চিত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এ বছর মার্চ মাস থেকে করোনায় দেশের সব ক'টি গরু বাজার বন্ধ ছিল। এজন্য আমরা খামারিরা গরু কিনতে পারিনি। প্রত্যেক বছর আমি ৫শ থেকে ৬শতাধিক গরু কোরবানের জন্য প্রস্তুত রাখতাম কিন্তু এবছর আমি ২শ গরুর বেশি নিতে পরিনি।

তিনি আরো বলেন, এই বছর কোরবানি পশুর বাজার কোন পরিসরে হবে আমরা এখনো নির্দেশনা পাইনি। ভারতীয় গরুর প্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরশুরামের বক্স মাহমুদের খেজুরিয়া ও মির্জানগর দিয়ে প্রতি রাতে ৬শ থেকে ৭শ গরু নামে। এইভাবে যদি গরু ঢুকলে খামারিদের সব কষ্ট, শ্রম ও পুঁজি বৃথা যাবে।

এদিকে সদর উপজেলার ধর্মপুরের খামারি মাজহারুল হক সুমন জানান, কোরবানির পশু নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েননি। সাম্প্রতিক বন্যা ও করোনায় গো-খাদ্যের সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দায় গরু বিক্রি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

খামারি ইলিয়াস মেম্বার জানান, গত ৬ বছর ধরে গরুর খামারের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। অর্থনৈতিক মন্দা, মানুষের অনাগ্রহ নতুন অভিজ্ঞতা। তাই আশংকা রয়েছে পুঁজি ফিরে না আসার।

ছাগল বিক্রেতা কামরুল ইসলাম জানান, এই বছর ছাগলের তুলনায় খাবারের দাম অনেক বেশি। তুলনামুলকভাবে গত কয়েকবছর ধরে ছাগলের পড়তি দাম আরও হতাশ করছে।এ অবস্থায় ঋণের বাড়তি চাপ যোগ হতে পারে।

জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান জানান, জেলায় মোট ছোট বড় গবাদি পশু খামার রয়েছে ৪ হাজার তিনশত উনচল্লিশটি। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে জেলায় মোট ৬৭ হাজার গরু, মহিষ এবং প্রায় ১৩ হাজার ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে। গবাদী পশু পালনকারীদের কাছে ৬১ হাজার ৯৭৯টি গরু ও মহিষ এবং ১৩ হাজার ৮১১টি ছাগল ও ভেড়া মজুদ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ৪ হাজার ২৯২টি গরু ও ছাগল ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর পশু ব্যবসায়ীরা ঘাটতি পুরণের জন্য অন্য জেলা থেকে গরু, ছাগল ক্রয় করে চাহিদা পুরণ করে।

গো-খাদ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু ব্যবহার না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুধুমাত্র ভিটামিন আর প্রাকৃতিক যে খাওয়া রয়েছে খামারিরা সেগুলো খাওয়াতে পারবেন।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে তিনি ধারণা করছেন করোনার প্রাদূর্ভাবের কারণে অথনৈতিক সংকট থাকায় অনেকে কোরবনী না করার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে পশু বিক্রয়ের পরিমান কমে গিয়ে উদ্বৃত্ত্ব থাকার সম্ভবনা রয়েছে।

শহরের একজন ব্যবসায়ী হাফেজ মোঃ নোমান বলেন, তীব্র আর্থিক সংকটকালে কোরবানির বিষয়টি যোগ হয়েছে। সামাজিকতা রক্ষার্থে কোরবানির পশু কিনতে হবে। তবে অন্যবারের চেয়ে কম দামে কোরবান সম্পন্ন করতে হবে।