ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য দেড়শ টন চাল ও ২ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ এসেছে। আজ সোমবার ( ১৩ জুলাই) জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন এ তথ্য জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৩শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

আজ সকালে ফুলগাজীর বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান।

পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক বলেন, মহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে অনেক মৎস্য ঘের ও ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় মানুষজন অববর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের প্রাথমিকভাবে শুকনো খাদ্য দেয়া হয়েছে। আজকেও তাদের ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসন করা হবে। তাদের প্রত্যেককে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পৌঁছে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে আছেন।

এলাকাবাসীর টেকসহ নির্মাণের দাবীর ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, বর্ষকালে পিক আওয়ারে ভারতের পাহাড়ী ঢলের পানি মহুরী নদী দিয়ে সাগরে ধাবিত হয়। এর ফলে পানির তীব্রতা অনেকগুন বেড়ে যাওয়ায় এ বাঁধগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। জেলা প্রশাসক বলেন, এছাড়া এখানকার মাটি বালি মিশ্রিত। ফলে শুকনোকালে কঠিন থাকলেও, বর্ষা এলে সেটি নরম হয়ে ভেঙ্গে যায়।

তিনি বলেন, আমি আশা করি পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসবেন।

জেলা প্রশাসক দুর্গত এলাকা পরিদর্শনকালে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, মহুরী নদীর তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ফুলগাজী ও পরশুরামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত দুইবছর এখানে ৭বারের মত বন্যা হয়েছে।

তিনি বলেন, গতবছর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ভাই এখানে এসেছিলেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন নদী খনন করে স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামতের জন্য ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু গত একবছর ধরে সেটি করা হয়নি। এবারও প্রতিবারের ন্যায় ফুলগাজী উপজেলায় বন্যায় নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪টি স্থানে ও পরশুরামের একটি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এতে পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল পুরো প্লাবিত হয়েছে। এতে করে আবাদী জমি, ফসলি জমি, বীজতলা, মাছের ঘের ভেসে গেছে।

আবদুল আলিম বলেন, আসলে এখানে ত্রাণের প্রয়োজন নেই, দরকার স্থায়ীভাবে নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণের।

তিনি বলেন, মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া একসময় সত্যিকার অর্থে নদী ছিল। সেটা ক্রমেই সংকুচিত হতে হতে এখন নর্দমায় পরিণত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপের ধারন ক্ষমতা এখন আর নেই। তিনি বলেন, এগুলো পুনঃখনন না করলে বাঁধ দিয়ে আসলে ফুলগাজী ও পরশুরামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে না।

এর আগে গতকাল রবিবার সন্ধ্যার দিকে টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর ৯টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। 

 গতকাল সন্ধ্যায় মহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১.৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২ কিলোমিটার অংশেই ৭টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃর্ষ্টি হয়েছে। এতে করে সদর ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ফুলগাজী-পরশুরাম সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

অন্যদিকে পরশুরামের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আক্তার, পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুর সাজেল, প্যানেল মেয়র রসুল আহম্মদ মজুমদার, চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন, বক্সমাহমুদ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরী।

পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের দুটি অংশে মুহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ২টি স্থানে ভেঙ্গে ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও দক্ষিণ শালধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুইটি অংশ ভেঙ্গে ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বর্তমানে পানি কিছুটা কমছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বাঁধের ভাঙন কবলিত অংশগুলো মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

মুহুরী নদীর বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে পানি কিছুটা কমলে বাঁধ মেরামতের কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান।

তিনি জানান, নতুন করে বাঁধের কোনো অংশে যেন ভাঙন না ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড সে ব্যবস্থা নিচ্ছে।