আজ শনিবার (১১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোভিড-১৯ সমন্বয় সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী।

শুরুতে ফেনীর প্রয়াত সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সভায় উপস্থিত জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর প্রধান ও প্রতিনিধিরা করোনায় নিজেদের কর্মযজ্ঞ সচিবের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন।

বক্তব্যকালে বারবার আলোচিত হন করোনায় মৃত ডাঃ সিভিল সার্জন। একাধিক বক্তব্যে সিভিল সার্জনের প্রতি শ্রদ্ধা, হৃদ্যতার স্মৃতিকথা আর দায়িত্বপরায়নতা বারবার উঠে আসে।

সচিব মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সিভিল সার্জন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির আগের রাতে কথা হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। যখনই কথা হয়েছে ফেনীর স্বাস্থ্যবিভাগকে সমৃদ্ধ করার আবেদন করেছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, যেদিন তার করোনা শনাক্ত হয়েছে সেদিনও আমরা দুটো মিটিং একসাথে বসে করেছি। তার কর্মনিষ্ঠা ও কর্মে ক্লান্তিহীনতা যে কোন ব্যক্তির জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।

কুমিল্লা সেনানিবাস ২৮ মিডিয়াম রেজিমেন্ট আর্টিলারি অধিনায়ক লে. কর্ণেল আসিফ আজমিন বলেন, কাজের প্রয়োজনেই সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন সিভিল সার্জনের সাথে আমার কথা হতো। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতো, পরামর্শ নিতাম। স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকরণ দেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেগুলো আমি তার হাতে তুলে দিতে পারিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বাবা-মায়ের করোনা পজিটিভ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, নিয়মিত সিভিল সার্জন হতে পরামর্শ নিয়েছি সেবা পেয়েছি। অথচ তিনি আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এটা মেনে নেয়া দায়, অনেক বেশী হৃদয়বিদারক।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত। পূর্বের জনবল নিয়েই স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এরমধ্যে পঞ্চাশের অধিক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। একজন সৎ ও যোগ্য সিভিল সার্জনের মৃত্যুতে স্বাস্থ্যবিভাগ শোকে বিহবল হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য গত ১২ জুন নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হতে প্রাপ্ত ফলাফলে সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন এর নমুনা পজিটিভ এসেছিল। এরপর দীর্ঘ ২৪ দিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত সপ্তাহের ৭ জুলাই মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে করোনা আক্রান্ত সিভিল সার্জন ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন বুধবার (৮ জুলাই) সকালে জানাযা শেষে তার পৈত্রিক নিবাস ফেনী সদর উপজেলার মধ্যম লেমুয়া দেওয়ানজি বাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত আরও ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান বিকম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী ছলিম উল্যাহ, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম, পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট হাফেজ আহম্মদ, ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গিটার প্রমূখ।