গত ১০ দিনে ফেনীর ১০জন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। এদের মধ্যে সোনাগাজীতে ৬জন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব। এছাড়া ফেনী সদর, দাগনভূঞা, ছাগলনাইয়া ও পরশুরামে একজন করে মোট ৪জন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে এতজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে গভীর শোক জানান সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালেব। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার সাক্ষী। প্রত্যেকেই এক একটি ইতিহাস। তাদের মৃত্যুতে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আরও তথ্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছি।

সোমবার (২৯ জুন) ফেনীর ছাগলনাইয়ার কৃতি সন্তান ‘গেদু চাচা’ খ্যাত প্রখ্যাত সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হক করোনা ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের গতিয়া সোনাপুর খোন্দকার বাড়ীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এরশাদের শাসনামলে ‘গেদু চাচার খোলা চিঠি’ কলাম লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই দিন সোমবার রাতে সোনাগাজী উপজেলা সদর ইউনিয়নের মোজাহিদ ওরফে জাহেদ চৌধুরী (৮০) ও দুলাল পাটোয়ারী (৭০) নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা মারা যান। তারা দুজনেই করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা যান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাদের নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানান সোনাগাজীর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আরেফীন।

রবিবার (২৮ জুন) করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আকরামুজ্জমান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সোমবার ( ২৯ জুন) বাদ আসর ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের বেদরাবাদ শিলুয়া গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এর আগে শুক্রবার (২৬ জুন) বিকাল সোয়া চারটার দিকে দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হাসান গনিপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে অসুস্থতাজনিত কারনে মারা যান সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শরীয়ত উল্লাহ বাঙালী। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরদিন শনিবার সকাল দশটায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শরিয়ত উল্লাহ বাঙালি জামায়াতে ইসলামের সাবেক আমির মকবুল আহমাদ ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম স্বাক্ষী ছিলেন।

একইদিন শুক্রবার (২৬ জুন) ভোররাতে সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ক্বারী রফিক উদ্দিন মাষ্টার। তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে রাষ্ট্রিয় মর্যদায় তাকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

একইদিন শুক্রবার (২৬ জুন) ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে মারা যান পরশুরাম পৌরসভার সলিয়া মজুমদার বাড়ির কৃতি সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আলহাজ্ব মাওলানা আজিজুল হক মজুমদার ওরফে আমিন মৌলভী (৮৩)। ওইদিন সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের এই সভাপতিকে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ( ২৫ জুন) সন্ধ্যার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সফরপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নাছির উদ্দিন জানায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নবাবপুর ইউনিয়নের নবাবপুর বাজারের পাশে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে আব্দুল কাদের পেটে ও উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরতর আহত হন। পরে তাকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের বেলিবাড়িয়াতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।

এর আগে সোমবার (২২ জুন) বিকালে সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের জিৎপুরের মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ (৯৩) ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। সোনাগাজীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন আক্তারের উপস্থিতিতে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।