দুর্ভাগ্যক্রমে হোক বা অদৃষ্টক্রমেই হোক, শুক্রবার এলে ফেনীতে লাফিয়ে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আজ শুক্রবার (১২ জুন) ফের সেই অশনি সংবাদ জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ নতুন করে ফেনীতে আরও ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

এ নিয়ে ফেনীতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১১জনে। আর আজ পর্যন্ত শনাক্তকৃত সর্বোচ্চ সংখ্যার বেশিরভাগ যোগ হয়েছে শুক্রবারে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৯ মে শুক্রবার ফেনীতে একদিনে ৪৭ জন, গত শুক্রবার (৫ জুন) ৩২জন আর আজ শুক্রবার (১২ জুন) ৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মাঝখানে গত ৮জুন একদিনে ফেনীতে সর্বোচ্চ ৪৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত ১৫ দিনে মোট ৩১৮জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট শনাক্তের প্রায় ৭৬ ভাগ শনাক্ত করা হয়েছে ১৫ দিনে।

সূত্র জানায়, নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনী সদরে ১০জন, দাগনভূঞায় ১১জন ও ছাগলনাইয়ায় ১৮জন রয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য ১জন রয়েছেন। নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনীর সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন রয়েছেন। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন ৪ জন পুলিশ সদস্য ও ২ জন ব্যাংক কর্মকর্তা।

সিভিল সার্জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদ রানা ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন করা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুবাইয়েত বিন করিম জানান, দাগনভূঞায় নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে পৌরসভায় ৬জন, জায়লস্করে ১জন, সদর ইউনিয়নে ১ জন, ইয়াকুবপুরে ১ ও রাজাপুরে ২জন রয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০৮ জনে। আর এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২৬জন।

ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শিহাব উদ্দিন জানান, আজ নুতন করে উপজেলায় ১৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন নতুন আক্রান্ত এবং মটুয়ার ১ জন পুরাতন রোগীর ২য় নমুনা পজিটিভ এসেছে। এ নিয়ে উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্য ৬১জন। নুতন শনাক্তকৃতদের মধ্যে পৌরসভায় ১০জন, শুভপুরে ২জন, মহামায়ায় ১জন, ঘোপালে ১জন, রাধনগরে ১জন ও পাঠানগওে ৩জন রয়েছেন।

ডাঃ শিহাব উদ্দিন বলেন, গতকাল দুপুরে ফেনী জেলার সুযোগ্য সিভিল সার্জন মহোদয় ছাগলনাইয়া হাসপাতালে এসেছিলেন করোনা আইসোলেশান ওয়ার্ড এবং সার্বিক বিষয় তত্বাবধানে। দীর্ঘসময় একসাথে কাজ করেছিলাম। আজ শুনলাম স্যারের করোনা পজিটিভ। তাই আমাকে হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ শোয়েব ইমতিয়াজ নিলয় আমার অবর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হয়েছে ১৫৪জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভুঞা উপজেলায়। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ১০৮ জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে ছাগলনাইয়ায় ৬১জন, সোনাগাজীতে ৫৫জন, পরশুরামে ১৬জন ও ফুলগাজীতে ৯জন। এছাড়া আরও ৮জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বর্তমানে ১৩ জন করোনা রোগী ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১০জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। করোনায় এখন পর্যন্ত জেলায় নয়জন মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০১জন।

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলাইনাইয়া উপজেলায় এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মাঝখানে আক্রান্তের হার সীমিত থাকলেও মে তে এসে তা লাফিয়ে লাফিয়ে ক্রমশ বাড়তে শুরু করে।