ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়া, শান্তিকোম্পানী রোড ও রামপুর। গতকালও ছিল এলাকাগুলোতে প্রানচাঞ্চল্য। রাস্তাঘাটে ছিল লোকজনের উপস্থিতি। আজ সেইসব এলাকার রাস্তাঘাটে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। এলাকগুলোর প্রবেশমুখে দেয়া হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে লোক চলাচলে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বহিরাগত প্রবেশ ঠেকাতে দেয়া হয়েছে পাহারা। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। 

আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুন) এ চিত্র দেখা গেল ফেনী পৌরসভার রেড জোন চিহ্নিত ডাক্তারপাড়া (১০নং ওয়ার্ড), (রামপুর ১৬ নং ওয়ার্ড) ও শান্তি কোম্পানি রোড (১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড) এলাকায়।

আজ সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব এলাকায় লকডাউন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহতাব উদ্দিন মুন্না। তিনি জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করায় প্রশাসন ও পৌরসভার নির্দেশে লকডাউন পালন করা হচ্ছে। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গতকাল বুধবার ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। এলাকার মুরুব্বী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা এতে সহযোগিতা করছেন।

তিনি বলেন, লকাডাউনকৃত এলাকায় সকল প্রকার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক গণজমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। ওইসব এলাকায় কোন বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবেনা। ওইসব এলাকার লোকজন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না। তাদের আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে হবে। তবে এলাকার কোন লোকজন কোন সমস্যায় পড়লে আমাদের জানালে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।

১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ জানান, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন ও ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর পরামর্শক্রমে ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডের সংক্রমিত কিছু এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে। তিনি বলেন, লকডাউন পালনে মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে সাড়া দিচ্ছে।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে অনেকদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করায় একটু সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয়রা।

সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার আবদুল মান্নান বলেন, লকডাউন হলেও আমাকে ব্যাংকে যেতে হবে। কারণ আমার কাছে ব্যাংকের চাবি রয়েছে। তারপর ব্যাংক আমাকে লকডাউনের কারণে ছুটিও দেয়নি।

অবশ্য লোকজনের একটু সমস্যা হলেও তারপরও এটি সকলের মেনে চলা উচিত বলছেন ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা ফেনী চেম্বারের পরিচালক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, জনস্বার্থ বিবেচনা করেই প্রশাসন এ নির্দেশনা জারী করেছে। সমস্যা হলেও সকলের এ নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।

এর আগে গতকাল বুধবার (১০ জুন) এসব এলাকায় করোনা ভাইরাস কার্যকর ও অধিক দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ফেনী পৌর এলাকার সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি এলাকায় লকডাউনের গণবিজ্ঞপ্তি জারী করে সদর উপজেলা প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নাসরীন সুলতানা জানান, আজ বৃহস্পতিবার ১১ জুন সকাল ৬টা হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওইসব এলাকা লকডাউন থাকবে।

অপরদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে ১২ জুন সকাল ৬টা থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ছাগলনাইয়া পৌরসভা এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা উপজেলা কমিটির সভাপতি সাজিয়া তাহের।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান জানান, দাগণভূঞার সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত এলাকাগুলো ২৫ জুন পর্যন্ত লকডাউন করা হয়েছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজজামান জানান, স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য ও সুপারিশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে আলোকে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

উল্লেখ্য, আজ বৃহস্পতিবার ২৫জন সহ ফেনীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭২ জনে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ফেনী সদরে ১৪২জন।