‘কাজ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছি আবার সুস্থ্য হয়ে আজ কাজে যোগদান করলাম। সত্যি বলতে মানুষের সেবা করাই আমাদের পেশা। মৃত্যুপথ থেকে ঈশ্বরের কৃপায় ফিরে আবার মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছি এটা ভেবেই অনেক ভালো লাগছে।’


করোনাকে পিছনে ফেলে মানুষের সেবার নিজেকে অর্পণ করার কথা জানাতে গিয়ে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকা পলি রাণী দাস এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।


করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সেবিকা বলেন, এই মুহূর্তে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই।


হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে গত ১৭ মে আক্রান্ত হয়েছেন তার আরও তিন সহযোদ্ধা অঞ্জলী রানী দাস (৫৬), সালমা সুলতানা চৌধুরী (৪৯), পপি রানী মন্ডল (২৬)। শুধু তাই নয়, সুস্থ হয়ে তারাও আবার যোগ দিয়েছেন কাজে। আজ বুধবার (৩ জুন) কাজে যোগদানের সময় তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


এর আগে গত ২৪ মে তাদের সুস্থ হওয়ায় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন।


করোনা রোগীর সামাজিক সমস্যা বিষয়ে এ সেবিকা বলেন, করোনা আক্রান্ত হলেই মানুষ তাকে ভিন্ন চোখে দেখে। যা মোটেও ঠিক নয়। আমিও এমন কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি।এসময় সকলের নিকট করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রতি মানবিক আচরণ করারও অনুরোধ জানান করোনা জয়ী এ সেবিকা।


উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১১ মে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। ১৭ মে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা যায় এ ৪ জন সেবিকার করোনা পজেটিভ। পরবর্তী তাদের আইসোলেশনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সূত্র জানায়, তাদের কোন ধরনের উপসর্গ বা শারীরিক সমস্যা না থাকায় ফলাফল পাওয়ার মুহূর্তেও দায়িত্বরত ছিলেন।


আক্রান্ত নার্সদের ২য় ও ৩য় নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, গত ১৭ ও ১৯ মে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে পাঠানো দু’বারের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসলে ২০ মে স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের সুস্থ্য ঘোষণা করে এবং ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশনা প্রদান করে।


করোনা জয়ী সেবিকা অঞ্জলী রানী দাস নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, যখন রিপোর্ট পেলাম আমি করোনা আক্রান্ত তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু ভয় পেয়েছিলাম। পরে অবশ্য তা কাটিয়ে উঠে অবশেষে আমি করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে উঠেছি, আজ আবার কাজে ফিরলাম। তিনি বলেন, আসলে মনে সাহস রাখলে আমরা করোনাকে জয় করতে পারব।


করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফুলগাজীর নিজ বাসায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন সেবিকা সালমা সুলতানা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার প্রথম শর্ত নিজেকে শতভাগ আইসোলেটেড করা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। তা না হলে তারাও আক্রান্ত হবেন।


আক্রান্ত অবস্থায় খাদ্যগ্রহণের বিষয়ে এ সেবিকা বলেন, বেশি বেশি গরম পানি খেতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি, ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তিনি বলেন, মনে সাহস রাখতে হবে, করোনা মানেই মৃত্যু নয়।


সুস্থ্য হওয়া আরেক সেবিকা পপি রানী মন্ডল বলেন, হাসপাতালে বরাদ্দকৃত বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। সবসময় সহকর্মী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন দিয়ে সাহস দিতেন। কখনো মনোবল হারায়নি। আজ সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলাম। ভালো লাগছে যে আমি আবার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হতে পারলাম।


বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে পপি বলেন, করোনা থেকে সেড়ে উঠতে বিশেষজ্ঞরা বারবার গরম পানি বা গলগল করার পরামর্শ দিচ্ছেন।কিন্তু আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে এ ধরনের অনেক সুবিধা পাওয়া কষ্টসাধ্য। যা বাসায় থেকে সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল খালেক মামুন বলেন, করোনা আক্রান্ত ৪ জন নার্স সদস্য সুস্থ্য হয়ে আজ কাজে যোগ দিয়েছে। তারা তাদের মনোবল ধরে রেখে আবারও কাজে যোগ দিয়েছেন তাই তাদের স্বাগত জানিয়েছি। সারাদেশের অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হবেন আশা করছি।


উপজেলা আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ ইন্দ্রজিত ঘোষ কনক বলেন, নার্স সদস্যদের কাজে ফেরার বিষয়টি ইতিবাচক।যা চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।


নার্সদের সহযোগিতার বিষয়ে আরএমও বলেন, করোনা আক্রান্ত নার্সদের প্রথম দিন থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।