ফারিয়া। দেড় বছর বয়সী এক অবুঝ শিশু। বাবা-মার পারিবারিক কলহে গত ৫দিন ধরে বঞ্চিত ছিল মায়ের ভালোবাসা হতে। ফারিয়ার মাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিষ্ঠুর বাবা তাকে আটকে রেখেছিল নিজের কাছে। ছোট্ট দুধের শিশুটি মুখফুটে কিছু বলতে পারারও শক্তি ছিল না, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া। আর একমাত্র সন্তানকে দূরে রেখে মায়ের মন ছটফট করছিল ভীষণ।


আজ শনিবার (৩০ মে) বিকালে ফেনীর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শাহজাহান সাজু ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর মমতায় ও তৎপরতায় মায়ের ভালোবাসা ফিরে পেল সেই দুগ্ধপোষ্য শিশু।


ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে এডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, গত ২০১১ সালে ফারিয়ার মা পিনু আক্তার ভালোবেসে ফেনী সদরের কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের মিয়াজান ভুঞা বাড়ির কামালউদ্দিন মহিনের ছেলে ফখরুল ইসলাম শিমুল কে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শিমুল তার বউকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিল। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার সে পিনুকে মারধোর করে তার বাবার বাড়ি পরশুরামে পাঠিয়ে দেয়। ফারিয়াকে রেখে দেয় নিজের কাছে।


সাজু বলেন, সন্তানের জন্য ছটফট করতে করতে সাহায্যের আশায় তার মা ছুটে যান ডাকসু নেতা সাদ চৌধুরীর কাছে। সাদ আমাকে গতকাল রাতে বিষয়টি অবহিত করে। রাতে ফারিয়া মার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি, তিনি কতটা অস্থির ও অসহায় হয়ে আছেন সন্তানের জন্য। তাকে আজ আমার চেম্বারে আসতে বলেছিলাম।


তিনি আরও বলেন, ফারিয়ার মা তার বাবাকে নিয়ে ছুটে এলেন আমাদের কাছে। ছিলনা তাদের কাছে কোন টাকা পয়সা। কিন্তু অসহায় মায়ের আকুতি দেখে আর স্থির থাকতে পারলামনা। স্থানীয় মেম্বার ও ফারিয়ার সাথে কথা বলেও কোন লাভ হলোনা। তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে হল। থানায় এজাহার পেয়ে ফেনী মডেল থানার ডিউটি অফিসার জোবায়দা নাহার অসহায় মায়ের সন্তানের জন্য আকুতি দেখে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিলেন। এসআই বিকাশকে ওয়্যারল্যাসে ম্যাসেজ দিয়ে তাড়াতাড়ি বাচ্চাটি উদ্ধার করতে বললেন। পরে পুলিশের তৎপরতায় বিকাল ৪টার দিকে মেয়েটিকে বাবার কাছ উদ্ধার করে মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।


সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, গতকাল রাত প্রায় ১২টার দিকে বাচ্চাটির মামা এবং মা আমার কাছে আসেন। হাউমাউ করে বাচ্চাটির মা কাঁদছিলেন। বিষয়টি এডভোকেট শাহজাহান সাজু ভাইকে জানালাম। ভরসা ছিল সাজু ভাইকে বললে টাকা লাগবে না, বরং প্রয়োজনে উনি নিজে দিবেন। আজ সকাল থেকে চেষ্টা করা হয়। সারাদিন চলে বিভিন্ন নাটক। কখনো বাচ্চাটি বাসায় ছিল না, আবার কখনো বাচ্চার বাবা ছিল না। পুলিশ আসার খবর শুনলে বাচ্চাটিসহ বাবা পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের ভূমিকার জন্য সেটি সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, পুরো প্রক্রিয়ায় সাজু ভাই নিজে তদারকি করেছেন। ফেনী মডেল থানার পুলিশের সহায়তায় বাচ্চাটিকে মায়ের কোলে ফেরত পাঠানো সক্ষম হয়েছে। সাজু ভাইসহ পুলিশ বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এতে লাগেনি কোন টাকা। বরং পরবর্তীতে সাজু ভাই তাদের সিএনজি ভাড়াও পরিশোধ করে বাচ্চাটির মা সহ তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।


এজন্য পুলিশ সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এডভোকেট শাহজাহান সাজু ও সাদ বিন কাদের চৌধুরী।


সন্তানকে ফিরে পেয়ে যেন পরম ধন ফিরে পেয়েছেন মা পিনু আক্তার। তিনি পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ গুথুমা গ্রামের সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রেজাউল করিমের মেয়ে।