বদলে যাচ্ছে ঈদ সংস্কৃতি। এবার ঈদে হৃদ্যতা যেন দুরের কোনো আলো। ম্লান মুখগুলো একবারও পরিচয় করিয়ে দেয়নি বিগত বছরগুলো ঈদ উদযাপনকে। ছোট বড় সবগুলো মুখে যেন জমাট বেঁধেছে বারি বর্ষণের মেঘ। করোনা বাধা হয়ে দাঁড়ালো ঈদের আনন্দের মেলবন্ধনে।

ঈদের দিনে নামাজ শেষে কোলাকুলি করা, হাত মেলানো ইসলামী সংস্কৃতির অংশ। সকালে ঘর থেকে বের হতে গোসল সেরে নতুন জামা পরা, এটিও ইসলামী সংস্কৃতির অংশ। তবে এর সাথে বাঙালির সংস্কৃতি যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এখানে কোলাকুলি গুলো দেহের সংস্পর্শের সাথে মনেরও সংস্পর্শ ঘটে। হাত মেলানো সংস্কৃতির সাথে যোগ হয় হৃদ্যতা। সব মিলে ঈদ মানে খুশী।


বৈশ্বিক মহামারী করোনাতে সম্পূর্ণ নতুন একটি ঈদ যেন আমাদের সামনে আজ। নামাজ শেষে মুসল্লিরা আজ আর কোলাকুলি করেননি। হাত মেলানো, পরস্পরের সাথে কাউকে তেমন ভাবে কথা বলতে দেখা যায়নি। একটা অজানা ভয়, অজানা শঙ্কা যেন সবার মনে। নিকট আত্মীয়কে দেখতে না পারার একটা কষ্ট সবার চোখে মুখে। ফেনীতে ঈদের প্রধান জামাত শেষে সাংবাদিকদের অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান। নামাজ শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যের কথাগুলোই যেন পুনরাবৃত্তি করলেন। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করা, ঘর থেকে বের না হওয়া- এখন সচেতন মানুষের প্রথম পরামর্শ।


গণমাধ্যমকর্মী মাইনুল রাসেল বর্ণনা করছিলেন ঈদের জামাত প্রসঙ্গে। দীর্ঘকাল ফেনীর মানুষ ময়দানে জামাতের নামাজ পড়ে অভ্যস্ত। এবছর মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমান।


দীর্ঘকাল ধরে ফেনী মিজান ময়দানে এবার বাঁশ তেরপালের ব্যস্ততা ছিল না। ইতিহাস নির্ভর এ জনপদে ঈদের আমেজ তৈরী হয় মিজান ময়দান হতে। ঈদের সাপ্তাহখানেক পূর্বে বিশাল ময়দানে শুরু হত নামাজের জন্য প্রস্তুতিপর্বের কাজ। এবার ময়দানে সুনসান নীরবতা। ঈদের সকালে মিজান রোডের আনন্দ মুখোর জনজট আজ দেখা মেলেনি। রাস্তার দু'পাশে ভিক্ষুকদের আল্লাহর কৃপা পেতে সুমধুর ধ্বনি আজে উচ্চারিত হয়নি। করোনা গ্রাস করেছে দানের সুযোগ, রুদ্ধ করেছে ভিক্ষুকের বাড়তি রোজগারের পথ। কিছু কিছু অসহায় মানুষের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি বোধকরি অনিবার্য পেশা।


ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ফেনীর উপ-পরিচালক মোঃ মনজুরুল আলম মজুমদার শনিবার জানিয়েছিলেন, ফেনীর ৩ হাজার ২৫৩টি মসজিদের মধ্যে আড়াই হাজার মসজিদে ঈদের জামাত হবে।


ব্যবসায়ী জেবল হক বর্ণনা করছিলেন জামাতে আগত মানুষের অচেনা আচরণ নিয়ে। তিনি বলেন, চোখে ভীতি, হাসি নেই মুখে। এক অজানা ভীতি গ্রাস করেছে ছোট্ট শিশুদেরও। অথচ পূর্বের ন্যায় পরিচ্ছন্ন কাপড়, গায়ে সুগন্ধি মেখেছে সব বয়সের মানুষ। আজ ঈদুল ফিতরের নামাজে মসজিদের আজকের চিত্র এমনই।


সদ্য কৈশোরে পা দেয়া ফেনী পাইলট হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জাওয়াদ আরিফ মেনে নিতে পারছেন না এমন ঈদ। প্রতিবছর সালামী পেত অনেক টাকা। এবার কোথাও যেতে পারেনি, তাই নতুন টাকা পকেটে আসেনি।


বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ, ভাল মন্দ আহার, ঈদগাহের সামনে বাঁশি, বেলুন, খেলনার পসরা সাজেনি আজ। স্থান পায়নি শিশু-কিশোরের কোলাহল। আজ ঈদের রঙ্গিন সকাল ছিল অনুপস্থিত, নেই হৃদ্যতা।